এই মুহূর্তে




নবগ্রহের দোষ কাটাতে চান? এই প্রাণীর ছবি বাড়িতে রেখে পুজো করুন




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় :           যস্মানয়ি দয়ালতুস্ত্বমাভিমুখ্যং পুরানকরোঃ।

তস্মাৎকদাঽপি কুত্রাপি কুতোঽপি ন ভয়ং মম ॥

তদ্দার্দৃশা দৃষ্টব্রহ্মাদ্যা লোকপালতাম্।

অগমনিগমোদ্ধরঃ ক্ব দন্যং ক্ব চতে দয়া ॥

হিন্দুধর্মের বিস্তৃতি ও গভীরতা এতই ব্যাপক, যে মাত্র এক শতাংশ জানাই দুষ্কর হয়ে পড়ে।  হিন্দু পৌরাণিক শাস্ত্রে অগণিত দেব-দেবী, ডাকিনী- যোগিনী-সহ উল্লেখ রয়েছে অসংখ্য উদ্ভট প্রাণীর। জানা যায়, সেই সকল প্রাণীর অধিকাংশই কোনও না কোনও মহা দেবতা বা দেবীর রূপ, যাঁর মাহাত্ম্য অসীম। তেমনই একটি প্রাণী হল নবগুঞ্জর, যা হিন্দুধর্মের এক অপূর্ব পৌরাণিক সৃষ্টি, যা নয়টি ভিন্ন প্রাণীর অঙ্গসমূহের সমন্বয়ে গঠিত। একদিকে এটি ভগবান বিষ্ণুর বিরাট, সর্বব্যাপী রূপের প্রকাশ, অন্যদিকে এটি ওড়িশার লোকজ সংস্কৃতি ও পটচিত্র শিল্পের এক অনন্য প্রতীক। ওড়িয়া মহাভারতে নবগুঞ্জরের বর্ণনা প্রথম পাওয়া যায় ওড়িয়া কবি সরল দাসের রচনায়, যা মহাভারতের অন্য কোনও সংস্করণে নেই।

নবগুঞ্জরের রহস্যময় রূপটি ছিল এমন—এটির মাথা মোরগের, গলা ময়ূরের মতো, পিঠে ষাঁড়ের কুঁজ, কোমর সিংহের বা বাঘের মতো, আর লেজে সর্প বিরাজমান। চারটি পায়ের মধ্যে একটি হাতির, একটি বাঘের, একটি ঘোড়া বা হরিণের, এবং চতুর্থটি মানুষের হাত, যা পদ্মফুল (বা কিছু মতে সুদর্শন চক্র) বহন করছে। এই নয়টি প্রাণীর সংমিশ্রণে তৈরি নবগুঞ্জরকে বলা হয় বিষ্ণুর জ্যোতিষ্ক বা অলৌকিক রূপ, যা তিনি অর্জুনের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।

মহাভারতের এক বিশেষ পর্বে, অর্জুন পর্বতে তপস্যা করছিলেন। হঠাৎ তিনি এক আশ্চর্যদর্শন প্রাণীকে তাঁর দিকে আসতে দেখেন, যার অদ্ভুত আকৃতিতে তিনি ভীত ও বিস্মিত হন। আতঙ্কিত অর্জুন ধনুক তুলে প্রাণীটিকে লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়তে উদ্যত হন। কিন্তু সেই প্রাণীর হাতের চক্র  দেখে অর্জুন বুঝতে পারেন যে এটি কোনও সাধারণ প্রাণী নয়, বরং স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণু। তখনই তিনি শাস্ত্র নামিয়ে প্রাণীটিকে প্রণাম করেন। সেই অদ্ভুত রূপ ধারণ করে ভগবান বিষ্ণু অর্জুনের কাছে তাঁর সর্বব্যাপী শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন।

ওড়িশার পটচিত্র শিল্পে নবগুঞ্জর একটি বহুল ব্যবহৃত মোটিফ। এটি শুধু শিল্প নয়, এক গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্যেরও প্রতীক। পটচিত্রে নবগুঞ্জরের জটিল রূপে নয়টি প্রাণীর প্রতিটি অংশ নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। নবগুঞ্জরের এই চিত্রই প্রমাণ করে প্রাচীন ভারতীয় শিল্পের অসামান্য কল্পনা ও দক্ষতা।

পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে নবগুঞ্জরের সম্পর্কও উল্লেখযোগ্য। মন্দিরের উত্তর দিকে নবগুঞ্জর-অর্জুনের দৃশ্য ভাস্কর্যে অঙ্কিত আছে। মন্দিরের উপরের অংশে থাকা নীলাচক্রের বাইরের প্রান্তে আটটি নবগুঞ্জর খোদাই করা রয়েছে, যা উপরের ধ্বজদণ্ডের দিকে মুখ করে রয়েছে। এগুলি লীলাপুরুষোত্তম জগন্নাথের সর্বময় শক্তি ও ভক্তপ্রেমের চিহ্ন হিসেবেও গণ্য হয়।

ওড়িশার গঞ্জিফা খেলা, যা প্রাচীন তাস খেলার এক ধরনের রূপ, তাতেও নবগুঞ্জরের চিত্র ব্যবহৃত হয়। পুরী এবং গঞ্জাম জেলার ‘অথ-রঙ্গি সারা’ তাসে নবগুঞ্জরকে রাজা এবং অর্জুনকে মন্ত্রী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এটি নবগুঞ্জরকেই শুধু জনপ্রিয়তা দেয়নি, ওড়িশার লোকজ ঐতিহ্যের সঙ্গেও এক গভীর সংযোগ তৈরি করেছে।

তাই নিঃসন্দেহেই বলা যেতে পারে, নবগুঞ্জরের রূপ কেবল ভয় বা বিস্ময়ের কারণ নয়, এটি ভগবান বিষ্ণুর অসীম শক্তি ও সর্বব্যাপী উপস্থিতির প্রতীক। অর্জুনের সামনে এই রূপে আবির্ভূত হয়ে বিষ্ণু বুঝিয়ে দেন যে ঈশ্বরের রূপ, ক্ষমতা ও রহস্য মানুষের কল্পনার সীমার বাইরে। নবগুঞ্জর আমাদের শেখায়—ঈশ্বরের ভক্তি, ক্ষমতা আর বিস্ময়ের কোনো সীমানা নেই। নবগুঞ্জরের কাহিনি হিন্দু ধর্মে ঈশ্বরের অলৌকিকতা ও ভক্তের প্রতি তার অশেষ করুণার এক চিরন্তন সাক্ষ্য। এই মূর্তি শুধু একটি পৌরাণিক চরিত্র নয়, এটি ওড়িশার সংস্কৃতি এবং শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নবগুঞ্জরের ছবি বাড়িতে রেখে পূজা করলে নবগ্রহের দোষ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

ওঁ নমঃ ভগবতে নবগুজ্ঞরায় নারায়ণায় নমঃ ।।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

লুকানো হৃদরোগ শনাক্তে কার্ডিওলজিস্টদের চেয়েও নির্ভুল এই নতুন AI টুল

আপনিও কি ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন? জানুন ঘরে বসেই

ঠাকুরঘরে কোন ধরনের মূর্তি রাখবেন, জেনে নিন বিশদে

জানেন কী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একমাত্র এই কৌরব যুদ্ধ করেছিলেন পাণ্ডবদের হয়ে?

সামনের সোমে বিশেষ হরিহর যোগ, শিব-নারায়ণের আশীর্বাদে ভাগ্য খুলবে এই চার রাশির

জানেন, কেন লক্ষ্মীদেবী সবসময় ভগবান নারায়ণের পায়ের কাছে বসেন?

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ