এই মুহূর্তে




হিন্দু হওয়ার অপরাধ, বাড়ি থেকে স্ত্রী-পুত্র সহ গায়ককে বের করে দিয়ে পোড়ানো হল বাড়ি




নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশে হিন্দু হয়ে জন্মানো কত বড় পাপ শেখ হাসিনা পরবর্তী জমানায় তা টের পেলেন জনপ্রিয় গায়ক, বাদ্যযন্ত্র শিল্পী এবং ‘জলের  গান’ ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দ। যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গান গেয়েছিলেন তিনি, সেই আন্দোলনের তথাকথিত সদস্যদের দ্বারাই লাঞ্ছিত হলেন তিনি। সোমবার শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে রাহুলের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, এক কাপড়ে স্ত্রী ঊর্মিলা শুক্লা আর ১৩ বছরের ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বাড়িটিতে। চোখের সামনেই নিজের হাতে তৈরি কয়েকশো বাদ্যযন্ত্র ও রেকর্ডিং সামগ্রী জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। উন্মত্ত পড়ুয়াদের হাত থেকে নিস্তার পেতে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছেন ‘জলের গান’ এর স্রষ্টা।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মহলে বোহেমিয়ান ও প্রতিভাশালী শিল্পী হিসাবেই পরিচিত রাহুল আনন্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছিলেন। ধানমন্ডিতে তাঁর বাড়ির দরজা ছিল সবার জন্য অবারিত দ্বার। যে দরজায় কোনও দিন তালা ঝোলাননি রাহুল। কিন্তু একদল হিংস্র, উন্মত্ত পিশাচ বোহেমিয়ান শিল্পীর সেই মাথা গোঁজার ঠাঁই-টুকু কেড়ে নিয়েছে। মঙ্গলবার ‘জলের গান’ ব্যান্ডের তরফে সমাজমাধ্যম ফেসবুকে রাহুলের ধানমন্ডির বাড়িতে দলের একটি গানের রেকর্ডিং ও সেই সঙ্গে একটি পোস্ট করা হয়েছে। পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল সেই পোস্ট। কোনও শব্দ বদলানো হয়নি।

স্বপ্নে তুমি দাগ দিও না।

সরলরেখার স্বপ্নে কারো বাঁক দিওনা! বাঁক দিওনা!

জলের গানের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসত বাড়ি ছিলোনা; ছিলো পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সু্র, আর দাদার ভাবনা প্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। শুধু তাই নয়। জলের গানের অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সকলের দলগত সংগীত চর্চা থেকে শুরু করে, সকল স্টুডিও ওয়ার্ক – রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই হতো।

যারা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তারা জানেন যে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সবসময় খোলাই থাকতো। তাতে তালা দেয়া হতোনা। যে কেউ, যেকোনো দরকারে যেন দাদার কাছে পৌঁছোতে পারে সেই ভাবনায়। আর যারাই দিনের যেকোন প্রান্তে এই বাড়িতে এসেছেন, সকলেই একটি চিত্রের সাথে খুব পরিচিত, তা হলো- রাহুল আনন্দ মাটিতে বসে একটি সিরিশ কাগজ হাতে নিয়ে তাঁর নতুন বাদ্যযন্ত্রের কাঠ ঘষছেন।

জলের গানের বাদ্যযন্ত্র। রাহুল আনন্দের বিরাট ভাবনা ও স্বপ্নের দিকে ধাবমান এক নিরন্তর প্রয়াস। আমাদের দেশীয় কাঠে তৈরি, আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্র। শুধুই কি আমাদের? এই দলের? জলের গানের? না! এই প্রয়াস সকল নবীন মিউজিশিয়ানদের জন্য, যারা বিশ্বাস করবে – আমরাও আমাদের বাপ দাদার মতো নিজেদের বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারি! এই প্রয়াস সেই স্বকীয়তার; যার বলে এই দেশের মানুষ গর্বের সাথে বলতে পারে, এই আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্রে বেজে ওঠা অনন্য শব্দতরঙ্গ যা কিনা পুরো পৃথিবীর বুকে কেবল এই বাংলাদেশের মাটিতেই ঝনঝন করে বাজে, সুর তোলে, স্বপ্ন দেখায়। যেই স্বপ্নের ঝিলিক সুদূর ফ্রান্স থেকে আরেকজন মিউজিশিয়ানকে আমাদের দেশে টেনে আনে। পুরো পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের চোখের আলো পড়ে আমাদের এই দেশে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের এই বাড়িটিতে।

তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতিমধ্যে সেখানে গিয়েছেন কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন তারা সকলেই খবরটি জানেন।

হ্যাঁ! – রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার, এবং আমাদের সকলের প্রিয় জলের গানের এই বাড়িটি আর নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সকল সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। কিন্তু, রাহুল দা এবং আমাদের দলের সকল বাদ্যযন্ত্র ,গানের নথিপত্র এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও, দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! সব! সকলের জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এক কাপড়ে তাঁর নিজ ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব হয়তো আজীবন লালিত থাকবে তাঁর সন্তানের মনে; যার বয়স কিনা মাত্র ১৩ বছর – ভাবতেই কষ্ট হয়। এতদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে!

এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়তো আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারবো। কিন্তু, এই ক্রোধ আর প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাবো কিভাবে! কেন আমরা ভালবাসা আর প্রেম দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে-

কোন্ ছোবলে স্বপ্ন আমার হলো সাদা কালো?

আমার বসত অন্ধকারে; তোরা থাকিস ভালো!”

সকল প্রাণ ভালো থাকুক। নতুন আগামীর স্বপ্নকে আমরাও অভিবাদন জানাই একইভাবে। কিন্তু, নিজের উল্লাসের চিৎকার এবং সজোর হাততালিতে কারো স্বপ্ন ভেঙে না দেই!

এই গানটি আমাদের এই ঘরে রেকর্ড করা শেষ গান। ভিডিওতে যা দেখছেন, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। উত্তাল সময়ের সাথে আমরাও একাত্ম ছিলাম গানে গানে। এই শেষ কাজটিই তবে সকলের জন্য আনন্দ উপহার।

জয়তু

জলের গান

 

 




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

বাংলাদেশকে পাঁচ টুকরো করার দাবি তুললেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা

জানেন কি, বিশ্বকর্মার হাতে হাতুড়ি ও দাঁড়িপাল্লা থাকে কেন ?

খুলল মুখোশ, নয়া রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করল কোটা আন্দোলনকারীরা

জেগে ওঠবে ডুবে যাওয়া প্রাচীন শহর! গিলে খাবে অন্ধকার! জেনে নিন কী ঘটবে কলিযুগের শেষে ?

আফ্রিকার পর এবার ভারত, খোঁজ মিলল মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত প্রথম রোগীর

তারেক রহমানকে ব্যঙ্গ করায় হিরো আলমকে গণধোলাই বিএনপি কর্মীদের

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর