নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষা কী শুধুই ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ! এই প্রশ্নটা আবারও উঠে এল এক অধ্যাপিকার প্রতি তাঁরই সহকর্মী এক অধ্যাপক জাতিগত বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায়। স্বাধীনতার পরে দেশের সর্বস্তরে শিক্ষার বিকাশ ও প্রসারণ ঘটেছে অনেকটাই। কিন্তু তারপরেও দেখা যাচ্ছে তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা এমন সব কথা বলে বসছেন বা এমন কিছু কাজ করে বসছেন যার জেরে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে যে তাঁরা আদৌ শিক্ষিত কিনা তা নিয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর মহকুমা এলাকার সবং ব্লকের সজনীকান্ত কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপকের কীর্তি সেই প্রশ্নকেই আবারও সামনে নিয়ে চলে এসেছে। কেননা তিনি তাঁরই সহকর্মী এক অধ্যাপিকাকে চূড়ান্ত অপমানজনক মন্তব্য করেছেন যার জেরে তাঁকে যে শুধু কলেজ থেকে সাসপেন্ডই হতে হয়েছে তাই নয় এখন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করেছে। আর আদালত তাঁকে পাঠিয়েছে জেল হেফাজতে।
জানা গিয়েছে, সজনীকান্ত কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নির্মল বেরা গত বছর অক্টোবর মাসে অনলাইন ক্লাস চলাকালীন জাতিগত বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা পাপিয়া মাণ্ডির প্রতি। তার জেরে পাপিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষকে এই ঘটনা সম্পর্কে জানালেও নির্মলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর জেরে গত ১৯ অক্টোবর পাপিয়া সবং থানায় নির্মলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সঙ্গে অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠান রাজ্য মহিলা মানবাধিকার কমিশনের কাছেও। কিন্তু কোনও দিক থেকেই নির্মলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছিল না। তার জেরে গত বছরের নভেম্বর মাসে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামে ভারত জাকাত মাঝি পরগাণা মহল। তাঁরা সবং কলেজ ঘেরাওয়ের ডাকও দিয়েছিল। তাঁদের লাগাতার প্রতিবাদ উঠে এসেছিল সংগঠনের পক্ষ থেকে। তার জেরে গত ১৭ ডিসেম্বর নির্মলকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন কলেজের অধ্যক্ষ তপনকুমার দত্ত।
কিন্তু তারপরেও নির্মলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছিল না পুলিশ। শেষে রাজ্য মহিলা কমিশন বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে পদক্ষেপ করতে বলে। তার জেরে সবং থানার পুলিশ তফসিলি জাতি ও জনজাতি আইন পোয়া’র ধারা অনুযায়ী নির্মলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের ওপর ভর দিয়েই নির্মলকে রবিবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এদিন তাঁকে তোলা হয় মেদিনীপুর আদালতে। তাঁকে এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। মঙ্গলবার ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে। যদিও সবংয়ের সজনীকান্ত কলেজের কলেজের অধ্যক্ষ তপনকুমার দত্ত জানিয়েছেন, তদন্তে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।