নিজস্ব প্রতিনিধি: আগুন বেশ ভালই লেগেছে পদ্মশিবিরে। নিত্যদিনই সেখানে এখন ঘটেছে বিস্ফোরণ। আর সেই বিস্ফোরণের জেরে দলের অন্দরে বিদ্রোহের আগুন যেন আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার সকালেই সামনে এসেছে পুরুলিয়া জেলায় বিজেপির ৫ বিধায়কের বিদ্রোহের ঘটনা। ওই বিধায়কেরা দলের জেলা সভাপতিকে অপসারিত করতে চিঠি পাঠিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে। সেই চিঠির প্রতিলিপি গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে। এই ঘটনায় রীতিমত বিড়াম্বনার মুখে পড়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু সেই ঘটনার মাঝেই আবারও ধাক্কা এল পুরুলিয়ার পাশের জেলা বাঁকুড়া থেকে। সেখানকার ৪জন বিধায়ক এবার দুই সাংগঠনিক জেলার দলীয় সভাপতিদের অপসারণ চেয়ে চিঠি দিল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা নাড্ডা-শাহকে।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার ২টি লোকসভা কেন্দ্র থেকেই জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির দুই প্রার্থী। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেই বাঁকুড়াতেই কিন্তু কিছুটা হলেও ধাক্কা খেতে হয়েছে বিজেপিকে। জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতে তাঁরা জয়ের মুখ দেখলেও লোকসভার ভোটের তুলনায় তাঁদের জয়ের মার্জিন অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তুলনায় ভোট বেড়েছিল তৃণমূলের। জেলার ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেও ফুটেছিল ঘাসফুল। ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছে খুব কম ভোটের ব্যবধানে। এই অবস্থায় বিজেপি বাঁকুড়া জেলায় সাংগঠনিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যাতে দলকে মজবুত করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা যায়। জেলা থেকে জেতা ২টি লোকসভা কেন্দ্রই যাতে ধরে রাখা যায়। সেই লক্ষ্যেই সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বাঁকুড়া জেলায় দলের দুই সাংগঠনিক জেলা বাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুর এই দুই ক্ষেত্রেই জেলা সভাপতি পদে রদবদল করে। বাঁকুড়া সদর সাংগঠনিক জেলার দলীয় সভাপতি পদে বিবেকানন্দ পাত্রকে সরিয়ে আনা হয়েছে সুনীল রুদ্র মণ্ডলকে। আবার বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ থেকে সুজিত অগস্তিকে সরিয়ে আনা হয়েছে বিল্বেশ্বর সিংহকে। এই দুই নেতাকেই এখন অপসারণের দাবি জানিয়ে শাহ-নাড্ডাকে চিঠি দিয়েছেন দলেরই ৪ বিধায়ক।
সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির বাঁকুড়া সদর সাংগঠনিক জেলার অধীনে থাকা ওন্দা এলাকার দলীয় বিধায়ক অমরনাথ শাখা ও বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা চিঠি পাঠিয়েছেন শাহ-নাড্ডাকে। দাবি সরাতে হবে সুনীল রুদ্র মণ্ডলকে। আবার বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার অধীনে থাকা সোনামুখী এলাকার বিধায়ক দিবাকর ঘরামি ও ইন্দাসের বিধায়ক নির্মলকুমার ধাড়াও চিঠি দিয়েছেন শাহ-নাড্ডাকে। সেই চিঠিতেই নাকি তাঁরা বিল্বেশ্বর সিংহকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই ৪ বিধায়কই আলাদা আলাদা চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা। তিনি জানিয়েছেন, ‘দলের জেলা সভাপতিকে ধারে এবং ভারে ভারী হতে হবে। না হলে তিনি সংগঠনকে ধরে রাখতে পারবেন না। সভাপতি যদি ভাবেন, অন্যের ইশারায় চলবেন তা হলে দল চলবে না। আমরা চাই শাসকদলের চমকানি, ধমকানি প্রতিহত করার মতো শক্তিশালী জেলা সভাপতি হোক সংগঠনে। এই অবস্থায় আমাদের জেলায় দলের বহু পুরনো কর্মী বসে গিয়েছেন। তাঁরা যাতে দলে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারেন সে জন্য আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছি। এই চিঠিতে কোনও বিধায়কের সভাপতি বা অন্যান্য পদাধিকারীকে পছন্দ না হওয়ার মতো অভিমানের বিষয়টিও থাকতে পারে।’