নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূল কংগ্রেস জমানায় রাজ্যের বিদ্যুৎ শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছেছে বিদ্যুৎ। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়েছে রাজ্যবাসী। তবুও অনেক ক্ষেরত্রেই কয়লার জোগানের জন্য মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু বীরভূমের মহম্মদবাজারের দেউচা পাঁচামি কয়লা খনিতে উৎপাদন শুরু হলে সেই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হবে। আগামী ১০০ বছর আর কয়লার জন্য যেমন কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না, তেমনই বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচেও সাশ্রয় হবে। ফলে রাজ্যের কোষাগারও অনেকটা স্ফীত হবে।
রাজ্যের উন্নয়নের জন্য দেউচা পাঁচামি প্রকল্প কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দেউচা পাঁচামি প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না তিনি। বরং স্থানীয় মানুষের আস্থা, বিশ্বাস, ভরসাকে পুঁজি করার পাশাপাশি, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটি পাকাপাকি করেই খনি প্রকল্পের কাজ শুরু হোক তেমনটাই চান তিনি। নবান্নের পদস্থ আমলাদের তেমন নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। পুনর্বাসনের প্রাথমিক প্রস্তাবগুলি কার্যত হতে নিয়েই আলোচনা শুরু করতে মাঠে নামবেন সরকারি কর্তারা। প্রকল্পের স্বার্থে এই উদ্যোগ ও পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে, রাজ্যের মানুষ থেকে শিল্প মহলের একটি বড় অংশ।
দেউচা পাঁচামি খনি প্রকল্প কেন এত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সরকারের কাছে? তার কারণ, এই প্রকল্পের হাত ধরে যেমন রাজ্যের খনি শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ হবে, পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তার সঙ্গে এই খনিটির হাত ধরে রাজ্যের বিদ্যুৎ শিল্পে কয়লার জোগান ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে যাবে। কারণ ওই খনি এলাকায় ১১টি মৌজার মাটির নীচে প্রায় ২১০ কোটি টন কয়লা মজুত রয়েছে। যা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে একক ভাবে তোলার অধিকার পেয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন সভায় বলেছেন, দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্প চালু হয়ে গেলে আগামী ১০০ বছর রাজ্যের বিদ্যুৎ শিল্পে কয়লার কোনও অভাব হবে না। বিদ্যুৎ বিশেজ্ঞরাও বলছেন, এই খনি প্রকল্পটি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোল ইন্ডিয়ার কয়লার উপর রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির নির্ভরতা আর থাকবে না। পাশাপাশি সম্পূর্ণ ভাবে নিজের কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে, উৎপাদন খরচ কমবে, তখন রাজ্যে বিদ্যুতের দামও কিছুটা কমতে পারে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল কাঁচা মালই হচ্ছে কয়লা।
রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি এখন তাদের নিজস্ব কয়েকটা খনি থেকে কয়লা পায়। ফলে কিছুটা কম নির্ভর করতে হয় কোল ইন্ডিয়ার উপর। তবে দেউচা পাঁচামি চালু হয়ে গেল কয়লা ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে অন্তত আগামী কয়েক দশক কারুর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। যা রাজ্যের মানুষের পক্ষেও মঙ্গল। কারণ রাজ্যের মাটির নীচেই জমে থাকা এই বিপুল খনিজ সম্পদের দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবেন রাজ্যরই মানুষ। যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়েই গড়তে চাইছেন। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে সারা দেশের কাছে, দেউচা পাঁচামি খনি প্রকল্পটি একটি উদাহরণ হয়ে উঠবে।