নিজস্ব প্রতিনিধি: নিরাশার চিত্র কিছুটা হলেও বদলেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই হরিয়ানা, রাজস্থান সহ গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে কন্যা ভ্রুণ হত্যা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও অর্ধেক আকাশের মালিকানা নারীদের দিতে রাজি নয় পুরুষ শাসিত সমাজ। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে শ্বশুরবাড়িতে কত বধূকে চরম নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। এখনও বহু রাজ্যে শিশু কন্যার জন্মকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।
তবে সেই হতাশাজনক চিত্রের মাঝে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি দেশের ১১টি রাজ্য ও তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার সেই রিপোর্টে উঠে আসা তথ্য যথেষ্টই চমকপ্রদ। জন্মহারে এই প্রথম শিশুপুত্রের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে শিশুকন্যা। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিকতম সমীক্ষায় গত চার বছরে দেশে ক্রমশ কমে এসেছে জন্মহার। শুধু তাই নয়, শিশুপুত্রের পরিবর্তে অনেকটাই বেড়েছে শিশু কন্যার জন্মও। ২০১৫-১৬ সালে যে জাতীয় সমীক্ষা হয়েছিল, তাতে জন্মহার ছিল ২.২। পরবর্তী দুই পর্বে যে সমীক্ষা হয়েছে, তাতে সেই জন্মহার বর্তমানে কমে হয়েছে ২। এই রিপোর্টে এমনও বলা হয়েছে যে ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই জন্মহার ২ বা তার নীচে। প্রতি হাজার জন শিশুপুত্রের অনুপাতে ১,০২০ জন শিশুকন্যা জন্মাচ্ছে এই দেশে।
দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক দাবি করেছে, সারা দেশেই জন্মনিয়ন্ত্রকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তার জেরেই দীর্ঘ সময় পরে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফল পাওয়া গিয়েছে। সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, জন্মনিয়ন্ত্রকের ব্যবহার ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ হয়েছে। অল্প বয়সে মেয়েদের মধ্যে মা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। আর এই সমীক্ষার রিপোর্ট সামনে আসার পর সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সব দিক থেকেই এই সমীক্ষার তথ্য দেশের পক্ষে মঙ্গল। একদিকে জন্মহার কমা। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি আটকানোর জন্য যে সমস্ত প্রকল্প শুরু হয়েছিল, তার সুফল পাবে পরবর্তী প্রজন্ম। পাশাপাশি শিশুপুত্রের অনুপাতে শিশুকন্যার জন্ম বেশি হওয়াটাও একটা শ্রেণির মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির দিকই ইঙ্গিত করছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত আদমশুমারিতে দেশে প্রতি হাজারে শিশু কন্যা জন্মানোর সংখ্যা কমে গিয়েছিল।
এই সমীক্ষায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে, দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রসবের সংখ্যা আট শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৯ শতাংশ হয়েছে। তবে সব কিছুর মধ্যেই ব্যতিক্রম থাকেই। ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের জন্মহার ২ বা তার নীচে নামলেও, ব্যতিক্রম মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলি। জন্মহার বেশি মণিপুর ও মেঘালয়েও।