নিজস্ব প্রতিনিধি: ৩৪ বছরের বাম জমানায় যা ঘটেনি, সাড়ে দশ বছরের তৃণমূল জমানায় সেই অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে। ২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের আগে শহুরে বাসিন্দারা ‘লোডশেডিংয়ের’ জ্বালায় জ্বলেপুড়ে মরতেন। আর গ্রামীণ বাসিন্দাদের কাছে বিদ্যুৎ ছিল অনেকটাই আকাশের চাঁদের মতো। বিস্তর গরিমসি ও গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে বছরের পর অসংখ্য গ্রাম বছরের পর বছর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটিয়েছে। যার ফলে দৈনন্দিন গেরস্থালির কাজের পাশাপাশি চাষাবাসের কাছেও চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল গ্রামীণ বাসিন্দাদের। প্রায়শই অভিযোগ উঠত, গ্রামের বাইরে বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতে দিয়েই বলে দেওয়া হতো গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেই ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে।
ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সবার ঘরে আলো’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রশাসনিক আধিকারিক ও বিদ্যুৎ দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছে তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, ‘বাংলার প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি কোনায় পৌঁছে দিতে হবে বিদ্যুৎ। সবার ঘরে আঁধার ঘুচিয়ে আলো জ্বালাতে হবে।’ রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক নেত্রীর সেই নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করে চলেছেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরা। গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে রাজ্যের প্রায় ১০০ শতাংশ গ্রামেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। এখন জোর কদমে চলছে, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ। গত কয়েক বছরে গ্রামাঞ্চলের কয়েক লক্ষ এপিএল ও বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের ঘরে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গ্রামে বিদ্যুৎ এসে পড়ায় বহু পরিবার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কাছে আবেদন করছে। সম্প্রতি এক প্রশাসনিক বৈঠকে ফের গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। যে সমস্ত এপিএল, বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলি এক সময় বাড়িতে বিদ্যুতের আলোর কথা ভাবতেই পারত না, আজ এই রকম হাজার হাজার পরিবারে সন্ধে হলেই বিদ্যুতের আলো জ্বলে। শুধু তাই নয়, দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলির জন্য ‘হাসির আলো’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ওই পরিবারগুলি প্রতি মাসে ২৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিখরচায় ব্যবহার করতে পারবেন। তিন মাসে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুতের কোনও দাম ওই গ্রাহক পরিবারগুলিকে দিতে হবে না। এই সুবিধায় উপকৃত হচ্ছেন বা হবেন রাজ্যের লক্ষ, লক্ষ দরিদ্র পরিবার। যাঁদের বাড়িতে শুধু বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে, তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের জন্য ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের দিকে ফিরে তাকালে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন যেখানে তৃণমূল সরকারের সাফল্যের চাবিকাঠিগুলির মধ্যে অন্যতম বলেই বিভিন্ন মহল মনে করছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার চালচিত্রের দিকে একবার চোখ বোলানো যাক—
১. তৃণমূল জমানায় ২০১৮ সালেই ১০০ শতাংশ বিদ্যুদয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে রাজ্য।
২. রাজ্যে কোনও বিদ্যুৎ ঘাটতি তো নেই, উল্টে চাহিদা মিটিয়েও বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকছে ।
৩. সারা দিনে গ্রাহকদের ঘরে গড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা থাকে ২৩.৭ ঘন্টা।
৪. কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রিসিটি অথরিটির তথ্য বলছে, নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা ও সিইএসসি দেশের মধ্যে সেরা বন্টন সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম।
৫. কেন্দ্রের তথ্যই বলছে, সারা দেশে ৮ টি রাজ্য গ্রাহকদের দিন – রাত বিদ্যুৎ পরিষেবা দিয়ে থাকে, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম।
৬. রাজ্যের শহর ও গ্রামের সমস্ত ধরনের গ্রাহকদের দিন রাত বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অন্য বেশ কিছু রাজ্যের মতো কোনও বৈষম্য রাখা হয় না।
৭. গৃহস্থ গ্রাহকদের পাশাপাশি রাজ্যের শিল্পাঞ্চলগুলিতেও দিন রাত উন্নত মানের বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হয়। কোনও লো ভোল্টেজ সমস্যা নেই।