নিজস্ব প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: জামিন পেলেন না বাংলাদেশে বিপন্ন হিন্দুদের রক্ষাকর্তা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের দায়রা বিচারক সাইফুল ইসলামের এজলাসে চিন্ময় প্রভুর হয়ে সওয়াল করতে রাজি হননি কোনও আইনজীবী। ফলে বিচারক মামলার শুনানি এক মাস পিছিয়ে দিয়েছেন। আগামী ২ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। ফলে ততদিন জেলেই কাটাতে হবে বাংলাদেশের বিপন্ন হিন্দুদের রক্ষাকর্তাকে।

গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র তথা চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চন্দন ধর ওরফে চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। পরের দিন ২৬ নভেম্বর চিন্ময়ের জামিন আবেদন খারিজ করে  দেন বিচারক। চিন্ময় প্রভুকে কারাগারে নেওয়ার সময় তাঁর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত হাজারখানেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। পরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে। আইনজীবী আলিফ খুন এবং আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর হামলা-গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেন তার বাবা এবং ভাই। বাবার করা হত্যা মামলায় ৩১ জনকে আসামি করা হলেও ভাইয়ের করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয় ১১৬ জনকে। সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী শুভাশিস শর্মাও ৩৩ নম্বর আসামি। এ ছাড়া চিন্ময়ের অনুসারী আরও ৭০ আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামি হওয়ায় অনেকে এখন গ্রেফর আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই গ্রেফতারি ও হামলা থেকে বাঁচতে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।

গত রবিবার ও সোমবার চট্টগ্রামের একাধিক হিন্দু আইনজীবীর উপরে হামলা চালিয়েছে জামায়াত ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী ও তার চ্যালা-চামুণ্ডারা। ওই হামলায় গুরুতর জখম হয়েছেন রিগান আচার্য ও রমেন রায় নামে দুই আইনজীবী। এর মধ্যে রমেন রায় আইসিইউতে রয়েছেন। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। হিন্দু আইনজীবীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি সাদা থান ও ধুতি পৌঁছে দিয়েছে জামায়াত ইসলামীর জঙ্গিরা। হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘মঙ্গলবার আদালতের ত্রিসীমানায় দেখলে জ্যান্ত পুঁতে দেব।’ সাদা থান পাওয়ার পরে প্রাণ ভয়ে অনেক হিন্দু আইনজীবী এলাকা ছেড়েছেন। অনেকে আবার মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ইসকন প্রবর্তক মন্দির পরিচালনা সমিতির সদস্য গৌরাঙ্গ দাস বলেন, চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তার পক্ষে যে আইনজীবীদের দাঁড়ানোর কথা তাদের সবাইকে বিভিন্ন মামলার আসামি করা হয়েছে। তাই শুনানিতে তাদের যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। হুমকি পাওয়ায় কোনও আইনজীবী পাওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হিন্দু আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের ভাইকে দিয়ে মামলা দায়ের ‘করানো হয়েছে। যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে আইনজীবীদেরও রাখা হয়েছে। যেন চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে শুনানি করতে কেউ দাঁড়াতে না পারেন।’

চিন্ময় প্রভুর জামিন শুনানি থাকায় এদিন সকাল থেকে চট্টগ্রাম আদালত চত্বর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে আগের দিনের অশান্তির কথা মাথায় রেখে চিন্ময় প্রভুকে এদিন আদালতে হাজির করানো হয়নি। সকাল থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠি হাতে আদালত চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সমিতির নেতা ও সাধারণ আইনজীবী এবং জামায়াত জঙ্গিরা। পুলিশের সামনেই আগ্নেয়াস্ত্র-সহ মিছিল করেন তারা। মামলার শুনানি হলে এজলাসে চিন্ময় প্রভুর হয়ে কোনও আইনজীবীকে দেখা যায়নি। সরকারের তরফে চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এনামুল হক জামিন শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানান। সেই আর্জি মেনে বিচারক এক মাসের জন্য শুনানি স্থগিত রাখেন।

পরে সহকারী পিপি এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি সরকারের তরফে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। বিচারক তাতে সাড়া দিয়ে ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। যেহেতু শুনানি হয়নি এই কারণে চিন্ময় প্রভুর  উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই। আবার দায়রা জজ আদালতে অপেক্ষমাণ থাকার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও জামিন শুনানি করার সুযোগ নেই। জেলেই পচে মরতে হবে তাঁকে।’