এই মুহূর্তে

মৌলবাদীদের খুনের হুমকির মুখে ইস্তফা চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেনের

নিজস্ব প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: পদ না ছাড়লে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে টানা তিন দিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গি ও মৌলবাদীরা। প্রশাসনকে জানিয়েও মেলেনি নিরাপত্তা। বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য পদে ইস্তফা দিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন। পঞ্চাশ বছরের বেশি শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত অনুপম সেনের এমন করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা এবং কোষাধ্যক্ষ তৌফিক সাঈদ। তাঁরাও ইস্তফা দিয়েছেন। অনুপম সেনের মতো একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের প্রতি মৌলবাদীদের এমন ব্যবহার নিয়ে রীতিমতো নিন্দার ঝড় উঠেছে।

অবিভক্ত পাকিস্তান জমানায় ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমান বুয়েটে) সমাজতত্ত্ব ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন অনুপম সেন। পরের বছর ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে নিজের শহর চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাক সেনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সহায়ক ও টিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে পুনরায় যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালের জুন থেকে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি অধ্যাপক পদে দায়িত্ব পালন করেন।পরে চট্টগ্রামের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব দেন। শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।

গত বুধবার থেকেই চট্টগ্রামের নব্য রাজাকার বাহিনী এবং জামায়াত ইসলামীর সশস্ত্র ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা উপাচার্যের পদ থেকে অনুপম সেনের ইস্তফার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ক্যাম্পাসেই তালা ঝোলায়। পড়ুয়াদের পক্ষে ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা ও চট্টগ্রামে হিন্দু নিধন যজ্ঞের পুরোধা রাসেল আমেদ সরাসরি অনুপম সেনকে রাত আটটার মধ্যে ইস্তফার সময়সীমা বেঁধে দেয়। ওই সময়সীমার মধ্যে ইস্তফা না দিয়ে প্রবীণ শিক্ষাবিদকে নগ্ন করে শহরে ঘোরানো হবে বলে হুমকি দেন। এখানেই থামেননি নব্য রাজাকার বাহিনীর প্রধান রাসেল। অনুপম সেনকে জ্যান্ত পুঁতে রাখারও হুমকি দেন। শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচতে জঙ্গি ও মৌলবাদীদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার আগেই সম্মান নিয়ে উপাচার্য পদে ইস্তফা দেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ।

ইস্তফা দেওয়ার আগে এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজকবিজ্ঞানী বলেন, ‘ ‘যেসব ছাত্ররা আমার পদত্যাগ চেয়েছে, তাদের আমি জানাতে চাই, আমি সারা জীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আমি কোনও দিন বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেছি, এমনটি মনে পড়ে না। ছাত্রদের যেমন সমানভাবে দেখেছি, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সম্মানজনকভাবে ব্যবহার করেছি। আমি আমার বেতন ও ভাতার বাইরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির তহবিল থেকে এক পয়সা অর্থ অনৈতিকভাবে গ্রহণ করিনি। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোন্ও দুর্নীতি, অন্যায় ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করিনি। জীবনে কোনও দিন জ্ঞাতসারে কারও ওপর কর্তৃত্ব করিনি। সবার উপকার করার চেষ্টা করেছি। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি বা না থাকি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল কামনা করব আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত।’

 

 

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা যাবে না, হুঙ্কার বাংলাদেশের মৌলবাদী নেতার

পাক ‘এজেন্ট’ পরীমণির ভিসার আর্জি ফের খারিজ করল ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস

১৭ বছর বাদে জেল থেকে ছাড়া পেলেন ভারতের গোয়েন্দাদের ঘুম কেড়ে নেওয়া জঙ্গি নেতা

নতুন প্রেমিককে ‘বান্ধবীর স্বামী’ বলে পরিচয় দিয়ে মুখরক্ষার চেষ্টা পরীমণির

সর্বনাশ, বাংলাদেশে HMPV-তে আক্রান্ত তরুণীর মৃত্যু

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে মোল্লা ইউনূসের ডাকা বৈঠক বয়কট বিএনপির

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর