নিজস্ব প্রতিনিধি: দীপান্বিতা অমাবস্যায় সারা বাংলা জুড়ে চলছে পুজো। বিভিন্ন পীঠস্থান ও তীর্থক্ষেত্রে চলছে পুজো। ৫১ সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম তমলুকের প্রাচীন মা বর্গভীমা মন্দিরে শুরু হয়েছে পুজো। পার্বতী দেবীর একান্ন শক্তিপীঠের এই পীঠে সতীর বাম গোড়ালি পড়েছিল। দেবী এখানে ভীমরূপা ‘কপালিনী’। তাঁর ভৈরব হলেন সর্বানন্দ। সতীপীঠ হলেও এই পীঠস্থান গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে অনেক বড় ইতিহাস। সেই মহাভারতের সময় থেকে যার কাহিনী শুরু। জানা গিয়েছে, ময়ূরবংশের রাজা তাম্রধ্বজের সময় এক জেলের বাড়ির মহিলা রোজ শোল মাছ নিয়ে যেতেন রাজবাড়িতে। হঠাৎ একদিন রাজা রাজপ্রাসাদে যাওয়ার সময় দেখেন সমস্ত শোলমাছ মারা গিয়েছেন। রাজপ্রাসাদের কাছেই এক জলাশয় থেকে জল মরা মাছ গুলির উপর ছেটাতেই শোল মাছ গুলি জ্যান্ত হয়ে ওঠে।
তখন রাজা বুঝতে পারেন কোনও অলৌকিক শক্তি রয়েছে ওই জলাশয়ে। তারপরেই ওই জলাশয়ের পাশে দেবীর একটি বিগ্রহ দেখতে পেয়েছিলেন। রাজা বুঝতে পারেন এই দেবী জাগ্রত এবং এই জলাশয়ের জলের দৈবগুণ আছে। তারপরেই তাম্রধ্বজ রাজার উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠা করা হয় মন্দির, যার নাম মা বর্গভীমার মন্দির। মা বর্গভীমা তমলুকের এই মাতৃমন্দিরে এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে বিরাজ করছেন বলে সেবায়েতরা জানিয়েছেন। মন্দিরে রয়েছে, নাটমন্দির, যজ্ঞ মন্দির, জগমোহন। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরে নির্মিত দেবীর মূর্তি। যার পুজো দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। চলতি বছরেও ভিড় বাড়ছে বিকেলের দিকে যেতেই। তবে করোনা বিধি মেনেই সবকিছু চলছে।
কালীপুজোতে সারাদিন চলে বিশেষ পুজোপাঠ। রাতে মাকে রাজরাজেশ্বরী বেশে সাজিয়ে চলে পূজার্চনা হোম যজ্ঞ। পুজো শেষ হয় ভোর রাতে। মাকে ষোড়শ উপাচারে পুজো করা হয়। মায়ের ভোগে শোল মাছ নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, তমলুক শহরে কোনও কালীপুজো শুরু হয় না যতক্ষন না বর্গভীমা মন্দিরে পুজো না দেওয়া হয়। প্রত্যেক কালী পুজোর কমিটির সদস্য ও পুরোহিতরা এসে মায়ের কাছে পুজো অর্পন করেই নিজেদের মন্ডপের পুজো শুরু করে। করোনার জন্য চলতি বছরে একজন পুরোহিত ও পুজো কমিটির সদস্যরা প্রবেশ করবেন মন্দির প্রাঙ্গনে। দেবী বর্গভীমার গর্ভগৃহে পুষ্পাঞ্জলি এবছর দিতে পারবেন না পুণ্যার্থীরা। করোনার সংক্রমণের জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে মন্দির কমিটির তরফে বাইরে দাঁড়িয়েই পুষ্পাঞ্জলি এবং পুজো দিতে পারবেন পুণ্যার্থীরা।