নিজস্ব প্রতিনিধি, দিল্লী: বাংলাদেশ ইস্যুতে এবার খুললেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে সংসদ ভবনে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বুধবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এসব বিষয়ে আমাদের কিছু বলা উচিত নয়। তবে বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। রাজনৈতিক মহলের ধারণা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhisekh Bandopadhay) দিল্লিতে বাংলাদেশ ইস্যুতে মুখ খুলে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন।অভিষেক আরোও বলেন , বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মূল মুখপাত্র চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মোল্লা ইউনুস সরকারকে কড়া বার্তা দেয় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।বাংলাদেশি সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত সরকার।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও জমায়েতকে বৈধতা দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। লিখিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে ভারত সরকার বেশ কিছুদিন থেকেই নজর করছে যে বাংলাদেশে হিন্দুদের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও হিন্দুদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। যথেচ্ছ লুটপাট ও অন্যান্য অপরাধ ঘটেছে। একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। হিন্দুদের ওপর একাধিক আক্রমণের ঘটনার পর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের পক্ষে মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস যখন শান্তির দাবিতে আন্দোলনে রাজপথে নেমেছেন সেই সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু তাই নয় মঙ্গলবার তার জামিন নাকচ করে দেওয়া হয়। লাগাতার আক্রমণের ঘটনার পর যখন বাংলাদেশের(Bangladesh ) সনাতনী হিন্দুরা জোট বদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সেই বিক্ষোভের উপরেও আক্রমণের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয় এবং তার জামিন নাকচ করা হয়।

এই ঘটনায় ভারত সরকার যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বলে জানিয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে সোমবার রাতেই পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ এইচডি হিন্দুত্বের অস্তিত্ব রক্ষার অন্যতম মুখ চিনময় মহাপ্রভুর নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবনের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় বিজেপি পক্ষ থেকে।বাংলাদেশের ইসকন সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে বলে দাবি তোলেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার স্পষ্ট হুমকি যদি অবিলম্বে বাংলাদেশের মোল্লা ইউনুস সরকার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি না দেয় তাহলে বাংলাদেশের কলকাতার রাষ্ট্রদূতের অফিসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। শুধু তাই নয়, সনাতনীরা, হাতে ধ্বজা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ বর্ডারে অবরোধ করবে। ভারত থেকে বাংলাদেশে কোন পরিষেবা যেতে দেওয়া হবে না। সব বন্ধ করে দেওয়া হবে। সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী জানান তিনি খুব চিন্তিত যেভাবে বাংলাদেশে ইসকন সংগঠক চিন্ময় কুমার দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করেছে সে দেশের সরকার ও পুলিশ। বাংলাদেশ হিন্দুদের সনাতনী আন্দোলনের নায়ক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেফতার হওয়ায় তিনি অশনি সংকেত দেখছেন বলে এদিন উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তার স্পষ্ট বক্তব্য, চিন্ময়ের নিঃস্বার্থ মুক্তি চাই।

না হলে বডার সনাতনীরা অবরুদ্ধ করে ভারত থেকে কোন পরিষেবা পেতে দেবে না বাংলাদেশকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ইতিমধ্যে কলকাতায় পার্কসার্কাস সংলগ্ন বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে লাল বাজারের পক্ষ থেকে। বাড়ানো হয়েছে ফোর্সের সংখ্যা। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাসের বাইরে নজর রাখছে লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল রুম। স্থানীয় থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় সোমবার বাংলাদেশের সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দারা। ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক শুধু জানিয়েছেন ইসকন সংগঠক চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত কথা তিনি জানাননি সংবাদ মাধ্যমকে। চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রাম রংপুর সহ একাধিক এলাকায় রাজপথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন। হিন্দুদের ওপরে দেশ জুড়ে চলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সড়ক হয়েছিলেন ইসকনের সহ-সম্পাদক তথা চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের প্রধান চিন্ময় কুমার দাস ব্রহ্মচারী। মুসলিম দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে হিন্দুদের বাঁচাতে সনাতন জাগরণ মঞ্চ নামে একটি নতুন সংগঠন তৈরি করেছিলেন। গত মাঝখানে ধরে দেশে বিভিন্ন জায়গায় এই সংগঠনের ব্যানারে সমাবেশ চলছে। আর ওই সমাবেশে লক্ষ লক্ষ হিন্দুর উপস্থিতি মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূসের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। গত অক্টোবরে জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ী চিন্ময় কুমার দাস ব্রহ্মচারী সহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের উনিশ নেতার নামে গায়ের হয় রাষ্ট্র দ্রোহ মামলা। দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনায় নিন্দায় স্বরূপ হয়েছিলেন বাংলাদেশের হিন্দুরা। গত শনিবার রংপুরে সনাতনী জাগরণ মঞ্চের এক সমাবেশে চিন্ময় কুমার দাস ব্রহ্মচারী হুমকি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ১ ইঞ্চি জমি ছাড়বেনা হিন্দুরা প্রয়োজনে আফগানিস্তান সিরিয়ার মতো লড়াই হবে। ওই হুমকির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে ঢাকা বিমানবন্দর(Dhaka Airport) এলাকা থেকে গ্রেফতার করল বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।