নিজস্ব প্রতিনিধি: মোদি(Narendra Modi) জমানায় দেশের একের পর এক রাজ্যের রাজ্যপালের(Governors) বিরুদ্ধে সরব হয়েছে দেশের একাধিক রাজ্যের সরকার। তার মধ্যে যেমন বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরল আছে তেমনি আছে তেলেঙ্গানা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডও। প্রতিটি রাজ্যের অভিযোগের সুর কার্যত একই। সেখানকার রাজ্যপালেরা প্রতি পদে পদে সরকারি কাজে বাধা দানের পাশাপাশি একের পর এক বিল আটকে রাখছেন ও রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে অনৈতিক ভাবে স্থগিত করে দিচ্ছেন। সেই নিয়েই মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে(Supreme Court)। এদিন অর্থাৎ শুক্রবার সেই শীর্ষ আদালতই তামিলনাড়ু ও পঞ্জাবের রাজ্যপালকে কড়া বার্তা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়(Chief Justice D Y Chandrachur) দুইজনকেই সাফ জানিয়ে দেন, ‘আপনারা আগুন নিয়ে খেলছেন। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের বিল আটকে রাখবেন না। এটা খুবই গুরুতর বিষয়। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ওই বিল আইনসভায় পাশ হয়েছে। তা আটকে রাখা অসাংবিধানিক(Unconstitutional Inaction)।’
সুপ্রিম কোর্টে তামিলনাড়ু ও পঞ্জাবের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা দায়ের হয়েছে তা মূলত সে রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া একাধিক বিল আটকে রাখার ঘটনা। সেখানকার রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলিতে রাজ্যপালের সন্মতি নেওয়ার জন্য পাঠানো হলেও সেই বিল সই করে ফেরত পাঠাননি রাজ্যপাল। বরঞ্চ তা আটকে রেখে দেন। সেই ঘটনাকেই এদিন কড়া নিন্দা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন দেশের প্রধান বিচারপতি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আপনারা আগুন নিয়ে খেলছেন। কীভাবে এইভাবে আপনারা আইনসভায় পাশ হয়ে যাওয়া বিল আটকে রাখেন! পঞ্জাবে যা হচ্ছে তা দেখে আমরা মোটেও খুশি নই। আমরা কী সংসদীয় গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়েছি? দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে যে রীতিনীতি আছে সেটা অনুসরন করুন।’ এর পাশাপাশি শীর্ষ আদালত সলিসেটর জেনারেল তুষার মেহতাকে নির্দেশ দেয়, পঞ্জাবের রাজ্যপাল হিসাবে বনওয়ারিলাল পুরোহিত ৭টি বিল আটকে রাখার ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ করেছেন তা নোটিস করে রাখতে।
তবে সুপ্রিম কোর্টের এই কড়া বার্তা অন্ধভক্র রাজ্যপালদের কানে গিয়ে কতটা পৌঁছাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মোদি জমানায় একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে একদলীয় একতান্ত্রিক কেন্দ্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার মতো পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে তেমনি রাজ্যগুলির অধিকার প্রতিনিয়ত খর্ব করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাজ্যপালের পদকে ব্যবহার করে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রশাসনিক অচলাবস্থা ডেকে আনা হচ্ছে। গেরুয়া শিবির থেকে যাদের রাজ্যপাল করে বিরোধী শাসিত রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে সেখানে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত সেখানকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা থেকে প্রশাসন, সবক্ষেত্রেই ওই সব রাজ্যপালেরা হস্তক্ষেপ করছেন ও একটা অচলাবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। মূল লক্ষ্যই হয়ে উঠছে ওই রাজ্যে গেরুয়া বিরোধী শাসক দলকে প্রতিনিয়ত বাধা দেওয়া যাতে তাঁরা সরকার চালাতেই না পারে। এদিন সুপ্রিম কোর্টের কড়া দাওয়াই এরপরেও ওই সব গেরুয়া শিবিরের রাজ্যপালদের ঘুম ভাঙাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।