এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

পুজোর ভ্রমণ: বাংলা-সিকিম সীমান্তে ছবির মতো সুন্দর গ্রাম গোর্খে

নিজস্ব প্রতিনিধি: গুগল ম্যাপ ঘাটলে জানা যায় পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে উত্তরের গ্রামটির নাম গোর্খে। বাংলা-সিকিম সীমান্তে অবস্থিত এই গ্রামটি কিন্তু ছবির মতো সুন্দর। বর্তমানে অনেকেই খোঁজ করেন অফবিট কোনও পর্যটন কেন্দ্রের। যেখানে প্রকৃতি ও নির্জনতা মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে। তাঁদের জন্য এই গোর্খে গ্রাম আদর্শ জায়গা। কেন? কারণ ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামকে অনেকেই আদর করে বাংলার কাশ্মীর বলেন। হিমালয়ের কোলে দার্জিলিং জেলার মধ্যে এক ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম হল গোর্খে। ছোট্ট শান্ত পাহাড়ি গ্রাম, পাশেই বয়ে যাচ্ছে ছোট্ট নদী গোর্খে খোলা। কথা প্রসঙ্গে বলে রাখি ছোট পাহাড়ি নদীকে খোলা বলে, যা কোনও বড় নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যাই হোক, এবার আসি গোর্খে প্রসঙ্গে। ছোট্ট একটি ট্রেকিং পথেই পৌঁছন যায় এই গ্রামে।

আগেই বলেছি গোর্খে হল পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে উত্তরের গ্রাম, যাকে সৌন্দর্যের জন্য একে বাংলার কাশ্মীর বা সুইজারল্যান্ড বলে থাকেন কেউ কেউ। কথা প্রসঙ্গে বলে রাখি এর অনন্য ইতিহাস। ভারতে তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন, ব্রিটিশরাই পূর্ব হিমালয়ের এইপ্রান্তে পাহাড়ের বুকে জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে তোলেন। হিমালয়ের কোলে এরকম বহু বসতি আজও রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্য কম পড়ায় জোর করে ভারতীয়দের যুদ্ধে নিয়ে যেতে শুরু করে ব্রিটিশ শাসকরা। সেই সময়ই এখানকার গোর্খা জনজাতির মানুষদের যুদ্ধে পাঠানো হয়। যারা ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন।

দুর্ধর্ষ গোর্খাদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে একদিকে যেমন গোর্খা রেজিমেন্ট গঠন করা হয় অন্যদিকে তাঁদের নামে ইংল্যান্ডের রানী আলাদা পুরস্কার ঘোষণা করেন। কালের নিয়মে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কিন্তু গোর্খে থেকে যায় স্বমহিমায়। ব্রিটিশ আমলেই এই গ্রামে স্থাপিত হয় একটি ফরোয়ার্ড বেস ক্যাম্প। কারণ, গোর্খে গ্রাম ভারত-চীন সীমান্ত McMohan Line খুব বেশি দূরে নয়। পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে ব্রিটিশ সূর্য অস্ত যায়। কিন্তু তার আগেই ব্রিটিশ রানী এই গোর্খে গ্রামকে খাজনামুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করেন। এখানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করে গোর্খা রেজিমেন্টের সৈনিক ও অফিসারদের থাকার ব্যবস্থা করেন। সেই থেকেই জন্ম নেয় আজকের গোর্খে গ্রাম।

গোর্খে গ্রামে দুই-এক দিন কাটিয়ে দেওয়াই যায়। ইতিহাসের গন্ধ গায়ে মেখে, পাইনের জঙ্গল ঘেরা পথে পাখির গান শুনতে শুনতে দূরের হিমালয়ের চূড়ার সঙ্গে লুকোচুরি খেলেই সময় কাটে এখানে। নীল আকাশে মাথা তুলে দাঁড়ানো পাইন বন, মেঘ ও কুয়াশায় মাখামাখি ঘন জঙ্গলের ফাঁক দিয়েই হিমালয় দর্শন। যা লিখে বোঝানো কার্যত অসম্ভব। গোর্খে গ্রামকে ঘিরে রেখেছে গোর্খে খোলা। পাহাড়ি উচ্ছল এই নদীর কলতান আপনি গ্রামের যে কোনো জায়গা থেকে শুনতে পাবেন। পাহাড়ের ধাপে ধাপে নদীটি যেন মিলিয়ে গিয়েছে গোর্খে উপত্যকার কোলে। বড়-বড় সব পাথর, আর তারমধ্যে দিয়েই নেমে আসছে জলের ধারা। তীব্র কন-কনে ঠান্ডা এই জল। ওই পাথরের উপরে বসে জলে পা-ডুবিয়ে রাখতে রাখতে মজে যান প্রকৃতির রূপে।

হিমালয়ের কোলে প্রকৃতির সাজে সেজে থাকা এই গোর্খে গ্রামের গায়ে যেন বিউটি স্পট হয়ে আছে এই গোর্খে খোলা। উচ্ছল পাহাড়ি নদী যেমন হয়, বড়-বড় সব পাথর, আর তারমধ্যে দিয়ে নেমে আসছে তিরতিরে জলের ধারা। তবে জলের তেজ বিশাল, তাই সর্বক্ষণ গর্জন করতে থাকে এই গোর্খে খোলা। গ্রামে ঢুকতে হলে এই গোর্খে খোলার উপরে একটি ছোট্ট ব্রিজ পেরোতে হবে। সমতলের কোনও কালভার্টের মতো হলেও এই ব্রিজের মহিমা গোর্খে গ্রামের অধিবাসীদের কাছে অনেক। কারণ সমতলের কোনও মানুষের পক্ষে এই ছোট্ট ব্রিজ ছাড়া গোর্খে-তে প্রবেশ করা কঠিন।

গোর্খে গ্রামে ঢুকে যেন স্বর্গ হাতে পাবেন। হিমালয়ের কোলে ঘন পাইন বনের মধ্যে সুন্দর সাজানো গোছানো গ্রাম। দারিদ্রতা থাকলেও গ্রামের মানুষজন বেশ অতিথি বৎসল। গ্রামের রাস্তায় পেয়ে যাবেন টমাটো, লঙ্কা, ফুলকপির ক্ষেত। বহু নাম না জানা পাহাড়ি ফুল ও অর্কিড গাছ দিয়ে সাজানো বাড়ি। এই চাষের জমির পাশ দিয়ে নেমে যান গোর্খে খোলার কাছে। বড় বড় পাথরগুলো এখানে যেন আরও বিশালাকার ফলে জলের তীব্র নির্ঘোষ। আর নদীর পাশ দিয়েই দেখবেন উঁকি মারছে কত নাসপাতির গাছ। শীতের সময় গাছে গাছে নাশপাতি ঝুলছে। আর পাবেন এক ধরনের নীল রঙের ছোট্ট পাখি এবং তাঁর তীব্র শীষের শব্দ। এছাড়াও আছে অসংখ্য পাখি, ছবি শিকারিদের কাছে স্বর্গরাজ্য।

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

আগেই বলেছি, গোর্খে হল সিকিম সীমান্তে বাংলার শেষ গ্রাম। তাই গোর্খে পৌঁছতে হলে কমবেশি ১০ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। মূলত দুই দিক থেকে পৌঁছন যায় গোর্খে। সিকিমের রিদ্ধি থেকে ৮ কিমি হাঁটলেই যাওয়া যাবে এই গ্রামে। আবার সিঙ্খোলা দিয়ে রামনাম হয়ে রিমবিম হয়ে মাত্র কয়েক কিলোমাটার ট্রেকিং করে গোর্খে পৌঁছে যেতে পারবেন। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় পথ ফালুট হয়ে। এই পথে ১৬ কিমি পথ ট্রেকিং করতে হলেও বেশিরভাগ ট্রেকাররা এই পথেই যান।

গোর্খে গ্রামে রয়েছে একাধিক হোম-স্টে। এছাড়া রয়েছে সরকারি ট্রেকার্স হাট। এই ট্রেকার্স হাট-এর বুকিং-এর জন্য জিটিএ-র দফতরে যোগাযোগ করতে হবে। কলকাতার সল্টলেকে জিটিএ-র দফতর আছে। সেখানে যোগাযোগ করে এই ট্রেকার্স হাট-এর বুকিং পাওয়া যায়। হোম-স্টে বুকিংয়ের জন্য় ওই দফতরেই যোগাযোগ করতে পারেন। আবার ইন্টারনেট ঘেঁটে খুঁজে দেখতে পারেন।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

‘ভোট ফর মা’ এই স্লোগানে টালার অলিগলির দেওয়াল রাঙিয়ে তুললেন মহিলারা

শাশুড়ি-বউমার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

জানেন কী, ভূত চতুর্দশী কেন পালিত হয়, ১৪ শাকই বা কেন খাওয়া হয়?

কালীপুজোর রাতে প্রদীপের শিখাতে ঘুরবে ভাগ্যের চাকা

কালীপুজোর দিন রাতে আগুন এড়াতে এই ধরণের পোশাক পরুন..

লোহা এবং ফাইবার দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৮০ ফুটের কালী প্রতিমা, জনজোয়ারে ভাসবে ব্যারাকপুর

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর