নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নবমী নিশি বাঙালির মনে যে মন খারাপ আর বিষাদের সুর ডেকে নিয়ে আসে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। বিজয়া দশমী কথাটার মধ্যেই তাই লুকিয়ে আছে আবেগ ও মন খারাপ মিশ্রিত এক অনুভূতি। এই তিথিতেই পিতৃগৃহ ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যান উমা। চোখের জল আর সিঁদুর খেলায় চলে তাঁর বরণ। মন যেন বলে ওঠে ঘরের মেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় ‘আর দুটো দিন থেকে গেলে হত না মা?’ উমা চলে যান কৈলাসে। শুরু হয় আরও একটা বছরের অপেক্ষা। আজ বিজয়া দশমী। সমস্ত বিভেদ, দুঃখ, কষ্ট, মনোমালিন্যকে দূরে সরিয়ে পাড়া প্রতিবেশি সকলের পরিবার হয়ে এক হয়ে যাওয়ার দিন।
এদিন প্রতিমা নিরঞ্জনের পর রীতি মেনে চলে মিষ্টিমুখ। সঙ্গে চলে কোলাকুলি আর বড়দের প্রনাম। এদিন দেদার মিষ্টিমুখ বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাবেক কিছু মিষ্টি। মা ঠাকুমাদের বানানো নারকেল নাড়ু, ছাঁচের সন্দেশ, মিহিদানা বোঁদে আর নোনতা বলতে নিমকি, অথবা মাংসের কিমা দিয়ে ঘুগনি। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসেছে নতুনত্ব, এসেছে খাবারে বৈচিত্র।
শুধু তাই নয় এক্ষেত্রেও থাকে বাঙাল -ঘটির সংঘর্ষ। তবে ইছামতির তীরের ছবি এদিনটা থাকে অন্যরকম। মিলেমিশে যায় দুই বাংলা। কারণ কাঁটাতারের বেড়া যে আজও ভাগ করতে পারেনি বাঙালির সংস্কৃতি। তবে খাবার পাতে চিরাচরিতভাবে বেশ কিছু পার্থক্য থাকে দুই বাংলার।
ঘটি মানেই পুজোর সময় নিরামিষ ভোজ। অষ্টমীতে লুচি। নবমিতে পাঁঠার মাংস ভাত আর দশমীতে নানান মিষ্টি। নাড়ু আর নিমকি সেখানে মাস্ট। তবে বাঙাল বাড়িতে এক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। এক এক প্রদেশের এক এক নিয়ম। তা হলেও মিষ্টিমুখ থেকে বিরত থাকেন না কেউই। আসুন দেখে নিই দশমীর মিষ্টিমুখে আপনি কী কী রাখতে পারেন-
ছানার পায়েস– পায়েসের ওপর কাজু কিসমিসের মেলবন্ধন দেখেই চোখ জুরিয়ে যাওয়ার জোগাড়। বাঙালি উৎসবে নানা রকমের পায়েসের সমাহারে এটি একটি যা খেতে আট থেকে আশি পছন্দ করে।
রসোগোল্লাঃ এই মিস্টি বাঙালির আরেক পরিচয়। মাঝে এর উৎপত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলেও বাংলাই পায় এই মিষ্টির স্বীকৃতি। শুধু তাই নয় জি আই স্বীকৃতি পাওয়ার দিনটি অর্থাৎ১৪ নভেম্বর রসগল্লা দিবস হিসাবেও ধরা হয়। বলা বাহুল্য রসগোল্লার এই উতপত্তিকে ঘিরে হয়ে গিয়েছে একটি গোটা সিনেমাও। যেখানে নবীনচন্দ্র দাশের এই মিষ্টি তৈরির অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন বাঙালি।
ল্যাংচাঃ কথিত আছে নদিয়া নিবাসি এক ময়রাকে বর্ধমানের রাজার পুত্রবধুর মিষ্টি খাওয়ার শখ পূরণে ডেকে পাঠান। তাঁর বানানো সেই মিষ্টির স্বাদে মুগ্ধ হয়ে রাজা শক্তিগড়ে সেই ময়রাকে এক দোকান করে দেন। এবং উল্লেখ্য সেই ময়রার ছিল পায়ের সমস্যা। ল্যাংড়া মিষ্টির কারিগরের সঙ্গেঈ তৈরি হয় মিষ্টির নাম ‘ল্যাংচা’। আর এই শক্তিগড় আজও ল্যাংচার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে।
মিহিদানাঃ বোঁদের আপডেটেড ভার্সন বলা যায় এই মিহিদানাকে। এই মিষ্টির উৎপত্তিও বর্ধমানেই। এর স্রষ্টা বর্ধমানের প্রসিদ্ধ মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগ। বর্ধমানের ভূস্বামী বিজয়চাঁদ মহতাব বড়লাট জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জনের বর্ধমান ভ্রমণে আসাকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই মিষ্টি তৈরির নির্দেশ দেন যা আজও মিষ্টিমুখ করিয়ে মন ভোলাচ্ছে সবার।
তবে এই সাবেক মিষ্টি গুলির পাশাপাশি আপনি নতুনভাবেও এগুলিকে বানাতে পারেন। তাতে থাকবে সাবেকিয়ানা ও নতুনত্বও।