নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের আইন ভঙ্গ করে ছবি, এবং সেই ছবিকে ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ প্রিমিয়ার, একাধিক অপরাধের কারণে ৮ বছরের কারাদণ্ডে দন্ডিত হলেন জনপ্রিয় ইরানি পরিচালক মোহাম্মদ রাসউলফ্ (Iranian filmmaker Mohammad Rasoulof)। এতেই শেষ নয়, জেলের ভেতর তাঁকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং বিপুল জরিমানা-সহ তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিচালকের মানবাধিকার আইনজীবী বাবাক পাকনিয়া। তিনি তাঁর X হ্যান্ডেলে লিখে জানিয়েছেন, “রায়টি আপিল আদালতে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মামলাটি এখনও প্রয়োগের অপেক্ষায় হয়েছে। তাঁকে শাস্তির দেওয়ার প্রধান কারণ হল রাসউলফের একটি পাবলিক বিবৃতি। সঙ্গে তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্রের কাহিনী। যেটি দেশের নিরাপত্তাকে দূর্বল করার লক্ষ্যে অন্যতম সহযোগীতা বা যোগসাজশের উদাহরণ।” ৫২ বছর বয়সী রাসউলফ ইরানের অন্যতম প্রধান পরিচালক, যার সর্বশেষ চলচ্চিত্র হল ‘দ্য সিড অফ দ্য সেক্রেড ফিগ’ (The Seed of the Sacred Fig)।
যেটি আগামী সপ্তাহে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হওয়ার কথা ছিল। গত মাসেই কান উৎসবে এই ছবির অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা করা হয়েছিল। আর এর ফলেই ইরানি কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট চাপের মুখে পড়েছিলেন। পাকনিয়ার সাম্প্রতিক একটি ইমেল অনুযায়ী, “পরিচালকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ছবিটি [দ্য সিড অফ দ্য স্যাক্রেড ফিগ] তৈরি করার সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও লাইসেন্স নেননি। পাশাপাশি যে অভিনেত্রীরা ছবিতে অভিনয় করেছেন তাঁরা হিজাব সঠিকভাবে ব্যবহার করেননি।” ইতিমধ্যেই ফিল্মটির প্রযোজকরা রাজ্য পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। ছবির অভিনেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে এবং তাঁদের দেশ ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী তদন্ত করেছে। বুধবারের পরিচালককে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়। এই প্রথম নয়, এর আগেও পরিচালক ২০১০ সালে, সঠিক অনুমতি ছাড়া চিত্রগ্রহণের অভিযোগে ছয় বছরের জেল খেটে ছিলেন। পরে এক বছরে তাঁর সাজা কমানো হয়।
২০১৭ সালে, ইরানে ফেরার সময় তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাঁর শেষের বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ করা হয়। দুই বছর পর, ইসলামী বিপ্লবী আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং দেশ ত্যাগ এবং সামাজিক বা রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের জন্য দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়। তাঁর ২০১৭ সালের চলচ্চিত্র, এ ম্যান অফ ইন্টিগ্রিটি, ইরানে স্থানীয় দুর্নীতি নিয়ে তৈরি হয়েছিল। কানে আন সার্টেন রিগার্ড সাইডবার জিতেছিল। এরপর ২০২০ সালে, তাকে “ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অপপ্রচার” এর জন্য আরও এক বছরের কারাদণ্ড এবং দুই বছরের চলচ্চিত্র নির্মাণের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। যার অর্থ হল তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে পারেননি। যেখানে তার ফিল্ম দিয়ার ইজ নো ইভিল- ইরানে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে তৈরি ছবি শীর্ষ পুরস্কার জিতেছে, গোল্ডেন বিয়ার।
২০২২ সালের জুলাই মাসে রাসউলফ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আবাদানে একটি ভবন ধসের কারণে বিক্ষোভের সময় ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীকে অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি আবেদন পোস্ট করার পরে আবারও কারাবাসের হয়েছিলেন। যদিও স্বাস্থ্যগত কারণে পরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়, কিন্তু কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়া থেকে তাকে বাধা দেওয়া হয়, যেখানে তাঁর আন সার্টেন রিগার্ড জুরির সদস্য হিসেবে কাজ করার কথা ছিল।
