নিজস্ব প্রতিনিধি: মর্মান্তিক ঘটনা বললেও কম বলা হবে। কারন ঘটনা ঘিরে ক্রমশই রহস্য দানা বাঁধছে। উঠে আসছে বেশ কিছু অপ্রিয় প্রশ্নও। ঘটনার তদন্তে নেমে তাই পুলিশকেও ধীর পদক্ষেপে এগোতে হচ্ছে। রিহ্যাব সেন্টারে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুকে ঘিরেই এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি থানার শদীহগড় এলাকার বাসিন্দা বিভাস গুহ ও রুমকি গুহের ছেলে ময়ূখ গুহের মৃত্যু হয়েছে এলাকারই এক রিহ্যাব সেন্টারে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের এই ছাত্র নাকি মোবাইল গেমের প্রতি প্রচন্ড আসক্ত হয়ে পড়েছিল। আর তা ছাড়াতেই নাকি তাকে রিহ্যাব সেন্টারে দিয়েছিলেন গুহ দম্পতি। কিন্তু সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার সকালে খবর আসে যে ময়ূখ পেটে ব্যাথায় কাতর হয়ে পড়ায় তাকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে গেলে গুহ দম্পতি দেখেন তাঁদের ছেলে মারা গিয়েছে। আর এই ঘটনাকে ঘিরেই এখন উঠছে নানা প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, গত দুই বছর ধরে মোবাইল গেলে তীব্র আসক্ত হয়ে পড়েছিল ময়ূখ। তার জেরে বিঘ্নিত হচ্ছিল তার পড়াশোনাও। কোভিড কালে সেই আসক্তি আরও বেড়ে যাওয়ায় গুহ দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন ময়ূখকে রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানোর। সেই মতো তাঁরা গত জুলাই মাসে জলপাইগুড়ি পান্ডাপাড়া এলাকার একটি রিহ্যাব সেন্টারে ময়ূখকে ভর্তি করেন। সেখানেই গত ৩ মাস ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল ময়ূখ। ঘটনাচক্রে এদিনই সেখানে ময়ূখের শীতের পোশাক দিতে যাওয়ার কথা ছিল রুমকি গুহর। কিন্তু তার আগেই এদিন বেলার দিকে তাঁদের হোম থেকে জানানো হয়, পেটে ব্যাথা নিয়ে ময়ূখ কাতর হয়ে পড়ায় তাকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুহ দম্পতি সেই কথা শুনে হাসপাতালে ছুটে গেলে দেখেন ময়ূখ সেখানে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
এরপরেই গুহ দম্পতি পান্ডাপাড়া এলাকার ওই রিহ্যাব সেন্টারের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। তাঁদের দাবি, ওই হোম কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরেই মারা গিয়েছে ময়ূখ। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই হোম কর্তৃপক্ষ। তাঁদের পাল্টা দাবি, এদিন সকালে সবার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করে ময়ুখ। এরপর সকলের সঙ্গে ক্লাসও করে অসে। আচমকাই তার পেট ব্যাথা শুরু হয়। বেশ কয়েকবার শৌচাগারেও যায় সে। এরপর হোম কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কলিং করে পরিস্থিতি দেখায়। চিকিৎসক ময়ূখকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন চিকিৎসকেরা। ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসে পুলিশ। তাঁরা ঘটনার তদন্ত শুরুও করেছেন তবে এদিন বেশ কিছু জটিলতার জন্য ময়ূখের দেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। শুক্রবার তা হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এলে তবেই এই ঘটনার পিছনে থাকা আসল সত্য সামনে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মোবাইলে ভিডিও গেমসের নেশা কাটাতে এক কিশোরকে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতখানি সঠিক তা নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।