নিজস্ব প্রতিনিধি: জুয়া আর মদে আসক্তি ছিল আগে থেকেই। প্রথম আর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে মেরেধরে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারপরে করেছিলেন আরও একটা বিয়ে। কিন্তু সেই বউকে আর তাড়ালেন না, বরঞ্চ খুন করে বাড়ির সিঁড়ির নীচে পুঁতে দিয়েছিলেন তাঁর দেহ। তারওপর তৈরি করে দেন বাথরুম। এর পাশাপাশি রটিয়ে দিয়েছিলেন বউ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু সত্যিটা বেরিয়ে এল মদ্যপ অবস্থায় তিনি নিজেই বন্ধুদের সেই খুনের কথা জানিয়ে দেওয়ায়। ঘটনা জানাজানি হতেই গা ঢাকা দিলেন অভিযুক্ত। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঢালাই করা বাথরুমের নীচে মাটি খুঁড়ে নিখোঁজ গৃহবধূর দেহ তুলতে সক্ষম হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে নদিয়া(Nadia) জেলার ধানতলা(Dhantala) থানার শঙ্করপুর গ্রামে। অভিযুক্তের নাম রবীন্দ্রনাথ রায়(Rabindranath Roy)। বছর চল্লিশের রবীন্দ্রনাথ পেশায় টোটো চালক। পুলিশ এখন তার সন্ধান শুরু করেছে।
জানা গিয়েছে, দিন পনেরো আগে স্বামী-স্ত্রীর অশান্তির পর রবীন্দ্রনাথ তৃতীয় স্ত্রী মাম্পি রায়কে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রবীন্দ্রনাথ নিজেই সবাইকে জানিয়েছিল বউ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। যেহেতু রবীন্দ্রনাথের আগের দুই পক্ষকে রবীন্দ্রনাথই মেরেধরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তাই এবারের স্ত্রীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় সবাই ভেবেছিল মাম্পিকেও হয়তো রবীন্দ্রনাথ মেরেধরে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ঘটনাটি নিয়ে কেউ আর সেভাবে মাথা ঘামায়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রনাথ মদ্যপ অবস্থায় বন্ধুদের কাছে বলে ফেলে যে মাম্পিকে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য বাড়ির সিঁড়ির নীচে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দিয়ে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তার ওপরে বাথরুম তৈরি করে দিয়েছেন। সেই কথা শুনে চমকে যান তার বন্ধুরা। কার্যত তাঁরাই শুক্রবার সকালে পুলিশে খবর দেন। সেই কথা কানে যেতেই গা ঢাকা দেয় রবীন্দ্রনাথ। পরে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার জেরে রবীন্দ্রনাথের পরিবারের কেউ মুখ না খুললেও, প্রতিবেশীদের অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথ জুয়া-মদে আসক্ত ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথম পক্ষের ১৩ বছরের ছেলে ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে থাকত রবীন্দ্রনাথ। এরপর চার মাস আগে সে তৃতীয় বিয়ে করে। মাম্পিকেও একইভাবে অত্যাচার করত। দিন পনেরো আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বামী-স্ত্রীর বচসার পর আর মাম্পিকে কেউ দেখতে পাচ্ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ নিজেও জানিয়েছিলেন মাম্পি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বাড়ির লোকেরাও কী এই খুনে মদর দিয়েছে? তাঁরা কেউ কেন কিছু টের পেলেন না? আর কাদের দিয়েই বা সিঁড়ির নীচে ঢালাই বাথরুমের কাজ করিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ? তাঁরা কেন বুঝলেন না মাটির নীচে পোঁতা রয়েছে দেহ? পুলিশ এখন এই সব প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান শুরু করেছে। সেই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথেরও খোঁজ চলছে।