এই মুহূর্তে




মহাসমারোহে নদিয়ার শান্তিপুরে পালিত হল আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাহরাই পরব




নিজস্ব প্রতিনিধি, নদিয়া: বাংলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী আরো একটি পরব হল বাঁধনা পরব। এই পরবকে ঘিরে গ্রাম বাংলার ঘর থেকে গোয়াল সেজে ওঠে নানা রঙে। গোয়াল এবং গরুকে পূজা করাই এই পরবের মূল উদ্দেশ্য।আর এই পরবের একটি বিশেষ অংশ হল দেওয়াল চিত্র। নদিয়ায় কয়েকটি গ্রামে এই পরব ঘটা করে হলেও দেওয়াল চিত্র বিলুপ্ত। প্রায় দেখা যায় না বলা যেতে পারে।সহরাই পরবের একটি মূল্যবান অংশ দেয়াল চিত্র অংকন, যা অবশ্যই রক্ষা করা উচিত বলেই মনে করে আদিবাসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা।নতুন প্রজন্মকে এই চিত্র অঙ্কনে উৎসাহিত করতে হবেও বলে দাবি তাঁদের ।এ বছর ২০২৪-এ নদীয়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী দেয়াল চিত্র অংকন সারা নদিয়া(Nadia) ব্যাপী প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে দিশারী পরিবার।দিশারী সংস্থার ঝুমুরিয়া গবেষণা কেন্দ্রের(Jhumuria Recherche Center) প্রতিনিধিরা গত ২৭ সে নভেম্বর থেকে রং তুলি নিয়ে সমস্ত গ্রামগুলোতে পৌঁছে গিয়ে গ্রামবাসীদের সাহায্য করছেন দেয়াল চিত্র অঙ্কন করতে। সাথে পরব এবং চিত্র সম্বন্ধে তাদেরকে সজাগ করছেন।

আসুন এবার আমরা একটু জেনে নিই এই দেওয়াল চিত্র কি, কিভাবে ও কোন সময় তা অঙ্কন করা হয়।
পরব দিনে নিজের বাড়ির দেওয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এই চিত্র অঙ্কন করে থাকেন, যা শহরের এশিয়ান পেইন্টকেও হার মানায়। এই দেওয়াল চিত্রের বিষয়বস্তু মূলত পশু-পাখি, ফুল, লতাপাতা আর নানা আকারের, যেমন ত্রিভূজ এবং অর্ধ বৃত্তাকার কলকা। বাঁধনা পরবেই এই দেয়াল চিত্র অঙ্কন করতে দেখা যায়। এই অঙ্কন করতে গেলে সবচেয়ে প্রথম দরকার দেয়াল তৈরি করা। তাই দেয়াল তৈরির কাজ অন্তত দু’মাস আগে থেকে তারা শুরু করে দেয়। এ বছর ভারী বর্ষণ এবং অসময়ে বর্ষা হওয়াতে দেওয়াল করতে বেশ দেরি হয়ে গেছে । আর মাটির দেওয়ালই বা কোথায়? তাই আজকাল দেখা যায় সিমেন্টের দেয়ালেই মাটি লেপে এই চিত্র অঙ্কন করা হচ্ছে। বাড়ির দেওয়াল দুই ভাগে ভাগ করা হয়। উপরের অংশকে প্রাচীর আর নিচের অংশকে পীড়হা বলা হয়। মূলত প্রাচীর অংশেই ছবি আঁকা হয়। কয়েকটি ধাপে এই দেওয়াল তৈরি করতে হয়, তারপরে ছবি আঁকা। দেয়াল তৈরি করতে লালমাটি, সাদামাটি, চিটা মাটি এবং করাচ মাটির প্রয়োজন। প্রথমে অসমান দেয়ালকে সমান করতে হয় তারপর লাল মাটি দিয়ে দুই থেকে তিনবার লেপ দিতে হয়। এরপর গোবর জল দিয়ে তার উপরে লেপে দিতে হয়। এবার প্রস্তুত ক্যানভাস। অর্থাৎ বাড়ির দেওয়াল। ক্যানভাসে আকার ক্ষেত্রেও আমরা প্রথমে নানা রঙের প্রলেপ দিয়ে এভাবেই কাগজ বা কাপড় কে তৈরি করে ফেলি তারপরে আকা শুরু হয়। করাচ মাটি দিয়ে পীড়হা অংশ অর্থাৎ দেওয়ালের নিচের অংশটা কালো রং করা হয়। এই অংশটি প্রথমে মেরামত করা হয় তারপরে মাটি দিয়ে লেপে গোবর জল দিয়ে লেপন করে তাতে কালো রং করা হয়।

রান্না ঘরের দেওয়ালে, বাড়িতে ঢোকার দেওয়ালে এবং দরজা জানলার চার ধারে এই চিত্র অঙ্কন করে তারা। রং ছাড়াও চালের গুঁড়ো দিয়েও দেওয়াল চিত্র অঙ্কন করা হয়। রঙের মধ্যে লাল, সবুজ, বেগুনি, কালো, নীল ও হলুদের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যআঁকার উপরে গোল বা ত্রিভূজ আকারে কাঁচ কেটে বসানো হয়। আঁকা দু ধরনের হয়। কোন আঁকাতে রং ব্যবহার করা হয়, আবার কোনটাতে মাটির উচু উঁচু কাজ প্রাধান্য পায়। এই আঁকা গুলো রিলিফ এবং ফ্রেসকো নামে পরিচিত। ফ্রেসকো পদ্ধতিতে সেভাবে রং ব্যবহার করা হয় না। মাটির কাজটাই প্রাধান্য পায়, বেশিরভাগ মানুষ ফ্রেসকো পদ্ধতিকেই বেছে নেয়। পূর্বে প্রাকৃতিক রং দিয়েই তারা দেয়াল চিত্র অঙ্কন করত। নিজেরাই তৈরি করে নিত নানা রং। বর্তমানে বাজার থেকে রং কিনে এনে তারা দেওয়াল চিত্র অঙ্কন করে।এদিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই পরব অনুষ্ঠিত হয় নদিয়ার শান্তিপুরে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পহরায় উৎসবকে কেন্দ্র করে চার দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসবে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্যান্য মানুষের উপস্থিতি ও উৎসাহপূর্ণ অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়।

প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে আদিবাসী নৃত্য, গান, ও বাদ্যযন্ত্রের সুরে মুগ্ধ হন দর্শকরা। স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করে এই উৎসবকে আরও রঙিন ও প্রাণবন্ত করে তোলেন। নাচ, গান, ও লোকসংগীতের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গল্প তুলে ধরা হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি আরও গভীর শ্রদ্ধা জাগায়।আলপনা প্রতিযোগিতা:উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল আলপনা প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা বর্ণিল ও সৃষ্টিশীল আলপনার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা ও শিল্পীসত্তার প্রকাশ করেন। আলপনার নানা নকশায় আদিবাসী সমাজের জীবনধারা ও তাদের বিশেষ চিহ্ন ফুটিয়ে তোলা হয়, যা দর্শকদের মন কেড়ে নেয়।গান-বাজনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:এছাড়া ছিল স্থানীয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে আদিবাসী গানের পরিবেশনা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করাও এতে আনন্দের সাথে অংশ নেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকনৃত্যের তালে তালে পরিবেশ যেনো আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিভাবান শিল্পীরাও নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরেন।এই উৎসব শুধু আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সামাজিক বন্ধনেরও একটি প্রতীক। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এই ধরনের উৎসবের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও তুলে ধরতে আরও উদ্বুদ্ধ হন।উৎসবের সমাপ্তিতে সকল অংশগ্রহণকারী ও দর্শকরা আনন্দে মেতে ওঠেন এবং এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি সবার মনে একটি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

আদালতের নির্দেশে মগরাতে অপরাধী ধরতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ, আহত ৩ ,ধৃত ১১

মিলল না রফাসূত্র, আমজনতাকে বিপদে ফেলে ধর্মঘটে আলু ব্যবসায়ীরা

রামজীবনপুর পুরসভার কাউন্সিলরের স্ত্রী পেলেন ‘হাউস ফর অল’ স্কিমে বাড়ি

জাতীয় পতাকা সম্মান না করলে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা করবেন না ভারতীয় চিকিৎসক

নজরে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন, তৃণমূলের বিধায়কদের একগুচ্ছ দাওয়াই মমতার

বাংলাদেশে পণ্য রফতানি পুরোপুরি বন্ধের হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর