নিজস্ব প্রতিনিধি: স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) বাবা বিশ্বনাথ দত্ত (Biswanath Dutta) ছিলেন আইনজীবী। তাঁর রোজগারে চলত সংসার। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে ফেব্রুয়ারি নরেন্দ্রনাথের বাবা বিশ্বনাথ দত্ত মারা যান। সংসারের রোজগেরে ব্যক্তির মৃত্যুতে চরম আর্থিক কষ্টের মুখে পড়তে হয় সবার। সঙ্কট এমন জায়গায় পৌঁছয়, মাঝে মাঝে স্বামীজী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন নেমন্তন্ন আছে বলে। কারণ তিনি বাইরে চলে গেলে বাড়িতে থাকা খাবার অন্যরা পেট ভরে খেতে পারতেন। এদিকে বাইরে নরেন তখন উপোস থাকতেন অথবা কোনওদিন বাইরে খাবার জুটতো তাঁর।
স্বামী বিবেকানন্দর নয় ভাই-বোন ছিল। তার মধ্যম ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও বিদেশ ভ্রমণে বিবেকানন্দের সঙ্গী। কনিষ্ঠ ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট সাম্যবাদী নেতা ও লেখক। বিশ্বনাথ দত্তের মৃত্যুর ঠিক এক বছর পর ১৮৮৫ সালে বিবেকানন্দের পরিবারের অবস্থা কেমন ছিল তা তুলে ধরেছেন বিবেকানন্দ গবেষক শংকর তাঁর ‘অবিশ্বাস্য বিবেকানন্দ’ বইতে। বইতে তিনি লিখেছেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর শিষ্য স্বামী সারদানন্দকে বিবেকানন্দের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন জ্যৈষ্ঠ মাসের এক দুপুরে। তাঁরা ৩ গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়ে যা দেখেছেন তা এইরকম, ‘কেবল একখানি ভাঙা তক্তপোষ, একটা মাদুর ভাঁজকরা, ঘরের পশ্চিমদিকের তক্তপোষের উপর তুলা বের করা একটা গদি, দু’একটা ছেঁড়া বালিশ আর পশ্চিমদিকে একটা কালো মশারি পেরেকের উপর গুটান, কড়িকাঠ হইতে একটা টানা-পাখার ছেঁড়া ঝালর ঝুলিতেছে।’
১৯০৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দের ছোট ভাই ভূপেন্দ্রনাথকে আদালত এক বছরের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার কারণে। এরপর মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাম পরিচয় গোপন করে সিস্টার নিবেদিতার পরামর্শে তিনি আমেরিকায় চলে যান ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। দেশ ছাড়ার পর মায়ের সঙ্গে আর তাঁর কখনও দেখা হয়নি। কারণ ১৯১১ সালের ২৫ জুলাই ভুবনেশ্বেরী দেবী মেনিনজাইটিস রোগে ভুগতে ভুগতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।