এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

বাংলার ডাকাত কালী: জনশ্রুতি এবং ইতিহাস (পর্ব আট)

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাচীন কাল থেকেই অবিভক্ত বাংলাদেশে ডাকাতির সঙ্গে কালীপুজো ও তন্ত্রসাধনার এক সুনিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সেই আদিকাল থেকেই ডাকাতদল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীপুজো করতেন। তাঁদের পুজোর ধরণ ছিল যেমন আলাদা, তেমনই রীতিনীতি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। যা আজও কিছুটা ইতিহাসের পাতায় এবং অধিকাংশই জনশ্রুতিতে রয়ে গিয়েছে। আমরা সেরকমই কয়েকটি ডাকাত কালী মন্দিরের অজানা ইতিহাস এবং পুজোর রীতি ধারাবাহিকভাবে জানাবো।

৪০০ বছরের প্রাচীন গোবরজনা কালী মন্দির

কথিত আছে একসময় ডাকাতদের হাতেই এই কালীপুজোর সূচনা। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মালদা জেলার রতুয়া ২নং ব্লকের আড়াইডাঙ্গা অঞ্চলের গোবরজনা কালী মন্দির ঘিরে রয়েছে অসংখ্য জনশ্রুতি ও অলৌকিক গল্পগাথা। প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই গোবরজনা কালী মন্দির। এই মন্দিরে মা কালী এতটাই জাগ্রত যে ভিনরাজ্য থেকে প্রচুর পূণ্য়ার্থী চলে আসেন কালীপুজোর দিন। এমনকি পড়শি দেশ বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন গোবরজনা কালী মন্দিরে পুজো দিতে।

স্থানীয় জনশ্রুতি মালদা জেলার গোবরজনায় কালিন্দ্রী নদীর তীরে মা কালীর মন্দিরটি ডাকাত দলের হাতেই তৈরি হয়েছিল। ডাকাতরা নাকি ডাকাতির আগে ও পরে শক্তির আরাধনায় লিপ্ত হতেন এই কালী মন্দিরে। এ নিয়ে নানা লোককাহিনী ও জনশ্রুতি এলাকার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। জনশ্রুতি একসময় এখানে ডাকাত সর্দাররা নরবলি দিতেন। কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসের চরিত্র ডাকাত সম্রাট ভবানী পাঠক কালিন্দ্রী নদী দিয়ে পূর্ববঙ্গের ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথে বর্তমানে মালদার পুখুরিয়া থানার আড়াইডাঙ্গা এলাকার নদীর ধারে তার বজরা থামান। সেই সময় সেখানে আমবাগানের মধ্যে শিবির বানিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে মা কালী তাঁকে এই আমবাগানে থান তৈরি করে কালীপুজো করার নির্দেশ দেন। এরপরই কালিন্দ্রী নদীর মাটি ও গোবর দিয়ে মূর্তি তৈরি করেন। তিনি পুজো শুরু করেন। এরপর দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতরা এই পুজো করতেন।

তবে এখনও রীতি অনুযায়ী ছাগ ও মহিষবলি হয় এই প্রাচীন মন্দিরে। তবে দিনের পরিবর্তনের সঙ্গে এই ডাকাত কালী হয়ে দাঁড়িয়েছে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের পুজো। পুরনো প্রথা মেনেই এবারও হবে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ইতিহাস বিজড়িত মালদার গোবরজোনার কালীপুজো। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় পূণ্যতিথিতে এই পুজো হয়ে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন ছাড়াও অসংখ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ আসেন পুজো দিতে। জাগ্রত এই মন্দিরে মানত করতে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই প্রতি বছর কালীপুজোর দিন ভিড় করেন পূণ্য়ার্থীরা।

সিমলাগড়ের মা কালী

কথিত আছে একসময় ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে নরবলি দিত। পান্ডুয়ার সিমলাগড়ের কালীপুজোর ইতিহাস এমনই রোমহর্ষক। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো সিমলাগড়ের মা কালী। জানা গিয়েছে, বাদশা শেরশাহ জি টি রোড তৈরীর আগেই এই পুজো শুরু হয়েছিল। জনশ্রুতি ও ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে জানা যায় একসময় এই এলাকায় ছিল একটি শ্মশান, আর চারপাশ ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। আশেপাশে ছিল না কোনও জনবসতি। ফলে মরা পোড়ানো ছাড়া খুব একটা কেউ এই এলাকায় ঘেঁষতেন না। জানা যায় একসময় এক কাপালিক ওই এলাকায় ঘাঁটি গাড়েন। তিনি তালপাতার ছাউনি দিয়ে একটি আস্তানা তৈরি করেন এবং একটি পঞ্চমুণ্ডির আসন তৈরি করেন। এথানেই সাধনায় লিপ্ত ছিলেন ওই কাপালিক।

সম্ভবত ওই কাপালিকের হাত ধরেই এখানে মা কালীর মন্দির গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি একসময় ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই মন্দিরে নরবলিও দিতেন। শোনা যায়, ওই পরিবারের এক তান্ত্রিক তন্ত্র সাধনা করতে এসে ছিন্ন নরমুণ্ড দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এর পরেই তিনি নরবলি প্রথা বন্ধ করে দিয়ে ছাগ বলির ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই এলাকায় সৈন চলাচলের জন্য এই রাস্তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। তখনই স্থানীয় মানুষজন ভয় কাটিয়ে ওই মন্দিরে পুজো দিতে শুরু করেন। বর্তমানে এই জাগ্রত মন্দিরে মায়ের ১০৮ রকমের ভোগ হয় কালীপুজোর রাতে। ছাগবলি হলেও মাছের পদ থাকে মা কালীর জন্য।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গন ভাইফোঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বসিরহাটের ‘নবোদয় সংঘ’

বনগাঁ থানার এবারের কালীপুজোর থিম ‘ কৈলাস পর্বতে মহাদেব’

বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির “বড় বৌমা” পূজিত হলেন মা কালীর রূপে

নৈহাটির বড়মার পুজোয় ভক্তদের ভিড়

তারাপীঠে সারারাত খোলা থাকছে গর্ভ গৃহের দরজা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন উপবাস, নিজের হাতে রান্না করলেন ভোগ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর