নিজস্ব প্রতিনিধি: অগ্রহায়ণে ঘরে তোলা হয়েছিল নতুন ফসল। নবান্নের পরে বঙ্গের কৃষিভিত্তিক বড় উৎসব পৌষ সংক্রান্তি (SANKRANTI)। এই মাস ‘লক্ষ্মী মাস’। আবার এই মাস ‘টুসু মাস’। ধানের গোলা পূর্ণ থাকে এই সময়। ঘরের মেয়ে তো ঘরের লক্ষ্মী। তাই এই সময়ে পঞ্জিকায় বিয়ের তারিখ থাকে না। আবার এই পৌষ মাস জুড়ে পালন করা হয় টুসু আচার। সংক্রান্তির আগের দিনে সন্ধ্যা থেকে রাত জুড়ে ‘টুসু জাগরণ’ হয় ‘টুসু গান’ করে। সংক্রান্তির সকালে হয় বিসর্জন। আবার পৌষ সংক্রান্তির দিনে আরাধনা করা হয় দেবী লক্ষ্মীর। এই লক্ষ্মী পৌষ লক্ষ্মী নামেও পরিচিত। কারও মতে, দেবী লক্ষ্মী শস্যের দেবী। আবার কারও মতে শস্যের দেবী টুসু। গ্রাম বাংলায় আর্য এবং অনার্য সংস্কৃতি মিশে লক্ষ্মী এবং টুসু দু’ই দেবীই আরাধ্য ধর্ম বিশ্বাসীদের। ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়, নতুন ফসল।
পৌষের শেষ দিনে বা সংক্রান্তির আগের দিনে নানাবিধ উপাচারের মাধ্যমে আগলে রাখতে চায় ‘পরিপূর্ণ’ মাসকে। একেই বলা হয় ‘পৌষ আগালানো’। হয় ‘বাউরি বাঁধা’, ‘পিঠে গাছ’। বাউরি বাঁধা মানে বিভিন্ন আনাজের ফুল, সবজি দিয়ে সাজানো বা আলপনা দেওয়া। আর পিঠে গাছ মানে আলপনা দিয়ে পিঠে আঁকা বা পিঠে নিয়ে স্থানীয় বুলি লেখা। রান্না করার বাসন-দ্রব্যের ছাপ দেওয়া আলপনাও দেওয়া হয়। প্রলেপ দেওয়া হয় বাড়ির উনুনে।
প্রচলিত আছে ‘আউরি বাউরি’ রীতি। তুলসী মঞ্চের কাছে গোবরজল দেওয়ার পরে মাটিতে একটি ছোট ঘরের আলপনা করা হয়। সেখানে একদিকে থাকে ছেলের ও একদিকে থাকে মেয়ের ছবি। এরা ‘আউরি’ আর ‘বাউরি’। তাদের ওপরে দেওয়া হয় ধানের শিষ, আতপ চাল, শস্য। এরপরে খড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় ‘আউরি বাউরিকে। প্রদীপ, ফুল, ধূপ দেখিয়ে করা হয় পুজো। আর সেই সঙ্গে চলে উৎসবের আমেজে রকমারি পিঠে খাওয়া। দেদার ঘুড়ি ওড়ানো। প্রতি বছরের এবারেও দিনটি পালিত হচ্ছে ঐতিহ্য অটুট রেখে।