নিজস্ব প্রতিনিধি: ছোট থেকেই মেয়েটা ছুটে যেত তার চেয়ে আরও ছোটদের কাছে। সেই মেয়ে এখন নারী। পড়াশোনা করেছেন নার্সিং নিয়ে। ‘আজকের দশভূজা’ প্রজ্ঞা পারমিতা মণ্ডল। মেদিনীপুরের এই তরুণী’ই আজ আলো ফোটাচ্ছেন পথ শিশুদের জীবনে। শুধু তাই নয়, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া খুদেদের ভরসা এই প্রজ্ঞাই। আক্ষরিক অর্থেই তিনি ‘দুর্গতিনাশিনী’। তিনি ‘আশ্রয়’।
পারমিতা কাজ শুরু করেছিলেন নিজের ‘হাতখরচ’ বাঁচিয়ে। তখন থেকেই নিজের সামর্থ্য মতো অসহায় শিশুদের সাহায্য করতেন খাদ্যদ্রব্য, শিক্ষাসামগ্রী থেকে পোশাক কিনে দিয়ে। এই কাজ করতে করতেই তিনি নিজের উদ্যোগে খুলে ফেলেছিলেন ‘চাইল্ড রাইট মিডনাপুর’। মানে শিশুদের অধিকারের জন্য লড়াই করবে এই সংগঠন। শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে একাধিকবার সরব হয়েছেন প্রজ্ঞা। তার জন্য কত হুমকি’র মুখে যে তাঁকে পড়তে হয়েছে, তার ইয়াত্তা নেই। তবু লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা পারমিতা।
সেই ছোট থেকে ধীরে ধীরে কাঁধে তুলে নিয়েছেন গুরু দায়িত্ব। যাদের খাবার নেই, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেন প্রজ্ঞা। আবার কারও রেশন কার্ড করিয়ে দিতে হন্যে হয়ে বারবার ছোটেন। স্বাস্থ্যপরীক্ষা, চিকিৎসা, স্কুলে ভর্তি করা, পোশাকের ব্যবস্থা করা থেকে রাস্তা থেকে প্রসূতী ও সদ্যজাতকে উদ্ধার করে বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। সবেতেই এগিয়ে আসে একালের দুর্গা (DURGA)। স্বনির্ভর করে তুলতে শিশুদেরকে তিনি শিখিয়েছেন হাতের কাজও। শিখিয়েছেন, নাচ-গান- আবৃত্তি। আর গল্পের ছলে তুলে ধরেছেন মনীষীদের কথা। শিখিয়েছেন কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, তাও। এমনকি করোনার সময়েও দিন-রাত এক করে লড়াই চালিয়েছিলেন তিনি। প্রয়োজনে চেয়ে নেন আর্থিক সাহায্য। এগিয়ে আসেন সমাজের ‘সুজন’রা। আজ প্রজ্ঞার উদ্যোগে মেদিনীপুরের সেকপুরা স্টেশন রোডে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শিবির। আর তা করতে এগিয়ে এসেছে ‘টিম রক্তযোদ্ধা’। এদিন করা হয়েছে বস্ত্র বিতরণও।