নিজস্ব প্রতিনিধি, বালুরঘাট: দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর পর এবার কালীপুজো আসন্ন। আগামী ৪ নভেম্বর কালীপুজো। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে বোল্লা গ্রামে কালীপুজো হবে আগামী ২৬ নভেম্বর। আজ, শুক্রবার সম্পন্ন হল কাঠামো পুজো। এই গ্রামে মা কালীর নাম বোল্লা কালী। এই পুজো ঘিরে উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় ও জেলার বৃহত্তম মেলা বসে বোল্লা গ্রামজুড়ে। বিভিন্ন রাজ্য এমনকী বাংলাদেশ থেকেও বহু দর্শনার্থী ছুটে আসেন এই পুজোয়। চারদিনের মেলায় ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের সামগম হয়। তবে গতবছর করোনার জেরে শুধু নামমাত্র পুজোটুকু হয়েছিল। এবছর পুজোর আয়োজনের আগে প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে উদ্যোক্তারা।
কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে এই এলাকার জমিদার ছিলেন বল্লভ চৌধুরি। তার নাম অনুসারেই এই এলাকার নাম হয়েছে বোল্লা। সেসময় এক মহিলা স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি কালো পাথরখণ্ড সংগ্রহ করে সেটিকে মাতৃরূপে পুজো করেন। তার অনেক পরে জমিদার মুরারীমোহন চৌধুরি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে একটি মামলায় জড়িয়ে পড়েন। মামলা থেকে নিষ্পত্তি পেতে তিনি বোল্লা মায়ের কাছে মানত করেছিলেন। পরদিনই জমিদার মুক্তি পেয়েছিলেন। এরপর মা বোল্লা কালী একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। রাস পূর্ণিমা কেটে যাওয়ার পর দিন এক শুক্রবারে দেবীর ঘটা করে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। সেই থেকে রাস পূর্ণিমা কেটে যাওয়ার পর প্রথম শুক্রবারে এই পুজোর আয়োজন করা হয়। তবে এবছর রাস পূর্ণিমা পড়ছে শুক্রবারই অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর। সেক্ষেত্রে পরের শুক্রবার অর্থাৎ ২৬ নভেম্বর হতে চলেছে বোল্লা কালী পুজো।
মন্দির চত্বরেই রয়েছে পবিত্র মায়ের পুষ্করনি। প্রত্যেক বছর মায়ের পুজোর চারদিন পর শোভাযাত্রা করে এই পুষ্করনিতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তারপর থেকে সারা বছর প্রতিমার কাঠামো ওই পুষ্করনির জলে নিমজ্জিত থাকে। পরের বছর সেখান থেকে কাঠামো তুলে পুজো করা হয়। আজ, শুক্রবার ছিল সেই কাঠামো পুজোর দিন। এদিনের পুজোকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ভিড় জমিয়েছিলেন। বোল্লা পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সিদ্ধার্থ চৌধুরী জানান, বোল্লা কালীপুজোর দিনে শতাধিক ছোট-বড় মানতের পুজো হয়। প্রায় ৬ হাজারের মতো পাঁঠা বলি হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় প্রতিবছর।
তবে করোনার জেরে গতবছর নিয়মমাত্র পুজো হয়েছিল। বসেনি মেলা, দর্শনার্থীদের প্রতিমা দর্শন ও পুজো দেওয়া বন্ধ ছিল। যদিও এবারে পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত। একইসঙ্গে জেলার বেশিরভাগ মানুষেরই টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তাই এবার প্রশাসনের তরফে মেলার অনুমতি দেওয়া হবে বলেই আশাবাদী উদ্যোক্তারা। কারণ এই মেলাকে ঘিরেই বোল্লা গ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটে। পুজো কমিটির সদস্যরা জানান, তাঁদের উদ্যোগে মন্দির প্রাঙ্গণে করোনার প্রথম ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ডোজও দেওয়া হবে পুজোর সময়। ২৮ নভেম্বর অর্থাৎ রবিবার এলাকার প্রায় ৯০০ জনকে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার আয়োজন করবে তাঁরা।