নিসর্গ নির্যাস: সাধারণতন্ত্র দিবস (REPUBLIC DAY) ২৬ জানুয়ারি। ১৯৫০ সালে এই দিনে সংবিধান কার্যকর হয়েছিল। সেই দিন থেকেই ভারতের পথচলা শুরু গণতন্ত্রের দেশ পরিচয়ে। স্বাধীন নাগরিকদের দেশ ভারত। প্রজা পরিচয়ে আর কতদিন গণতন্ত্রের বুলি আওড়াবেন?
আজও বেশিরভাগ জনগণ নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন বিশেষ কোনও ‘নামজাদা’ ব্যক্তিত্বের ঘনিষ্ঠ হিসেবে। আজও বহু নাগরিক ‘পাওয়ার ব্রোকার’। মানে অন্যের পরিচয়ে বা অন্য কারও নিচে থেকেই খুশি। ওটাই তাঁদের কাছে ‘অহংকার’। ‘আত্মমর্যাদা’ নিভু নিভু। তাঁদের পরিচয় ‘প্রজা’। নিজেকে স্বাধীন ভাবাতে তাঁদের প্রবল আপত্তি। অধীনতাতেই খুঁজে পান ‘সুখ’। তাই ২৬ জানুয়ারি আজও কপচানো হয়, ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’। বিষয়টা ঠিক-ভুল ব্যাখ্যার চেয়ে অনেক বেশি আত্মমর্যাদার।
সাধারণতন্ত্রের দেশে নিজের পরিচয় ‘প্রজা’ না দিয়ে আসুন জোর গলায় সমস্বরে বলুন, ‘সাধারণতন্ত্র দিবস’। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতে লেখা, সার্বভৌম, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতন্ত্র, সাধারণতন্ত্রের কথা। তবু ‘প্রজাতন্ত্র’তেই নুইয়ে যায় মেরুদণ্ড। সাধারণ, সকলেই সমান ভাবতে প্রবল আপত্তি। অথচ আমাদের ভোটেই ঠিক হয় মদনদে কে বা কারা বসবেন। মূল ক্ষমতাধারী তো নাগরিকরাই। তবু ঝুটঝামেলা এড়াতে ‘দাসত্ব’ এর চেয়ে বড় সুখ আর কী! কথাগুলো ব্যথা দিলে আসুন এবার থেকে বলি, ‘শুভ সাধারণতন্ত্র দিবস। গর্বের সাধারণতন্ত্র দিবস’। সাধারণতন্ত্র তাই অধিকার, বাক স্বাধীনতা। ‘প্রজা’ সেজে গণতন্ত্রের বড় বড় বুলি আওড়ানো গেলেও তা ‘সাধারণতন্ত্র’ হয়ে যায় না।
কাগুজে বাঘ হয়ে লাভ কী? আবার অতিবিপ্লবী হয়ে কেউ স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা গুলিয়ে ফেলবেন না। বাক স্বাধীনতা মানে কিন্তু যা ইচ্ছে তাই বলা নয়। আমাদের দেশ কিন্তু সকল নাগরিকের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ন্যায় বিচার, চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম, উপাসনার স্বাধীনতা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন, সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা আর সকলের ব্যক্তি মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিতকরণের। আত্মীয়তার। তাই অন্যের অধিকার হরণ নৈব নৈব চ।