নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘টুসু মোদের মা গো/ আলতা পরা পা গো…’ এই লোকদেবী কুমারী। তিনি পূজিতা হন ঘরের মেয়ে রূপেই। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিন থেকে শুরু হয় এই উপাচারের। শেষ হয় পৌষ সংক্রান্তিতে। এই আরাধনা আসলে কৃষি ভিত্তিক লোক উৎসব। গঙ্গাসাগর (GANGA SAGAR), কেন্দুলি’র (NABANNA) মাঝে আজও স্বতন্ত্র ‘টুসু উৎসব’ (TUSU)।
পৌষ সংক্রান্তি (SANKRANTI) হল নতুন ফসল ক্ষেত থেকে ঘরে তোলার পর পরের বড় উৎসব। নতুন ফসলকে ঘরে তোলার উৎসব ‘নবান্ন’ (NABANNA)। এই উৎসব হয় অগ্রহায়ণে। তারপরে পৌষ মাস জুড়ে চলে টুসু আচার। মাসের শেষ দিনে রাত জেগে হয় টুসু বন্দনা- ‘জাগরণ’। আর মকরের দিনে বিসর্জন। ‘টুসু’ নামের পেছনে বেশকিছু মত রয়েছে। মনে করা হয়, ধানের ‘তুষ’ থেকেই ‘টুসু’ নামের উৎপত্তি। আবার তিষ্যা বা পুষ্যা বা ঊষা থেকেও এই নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। আবার একটি মতে, মধ্য প্রাচ্যের প্রজনন দেবতা ‘টেষুব’ থেকেই এসেছে ‘টুসু’ নামটি। উল্লেখ্য, পৌষ সংক্রান্তি’র সময়ে আরাধনা হয় দেবী লক্ষ্মীরও (LAXMI)।
এই পুজো মূলত মহিলারা করেন। পুজোর অন্যতম উপকরণ ধানের (আমন) শিষ, চাষদ্রব্য, নতুন ফসল। ১ মাস জুড়ে পুজো হলেও পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ‘জাগরণ’। একদিনের বিশেষ এই আচার ‘টুসু পরব’।
রাত গড়িয়ে ভোর পর্যন্ত চলে গান। এই গান ‘টুসু গা্ন’ নামেই পরিচিত। লোকগানে ফুটে ওঠে জীবন, প্রেম, দেহ, রাজনীতি, অভাব, কলহ তথা সমাজের কথা। এই ধরণের গানে সাধারণত ৪টি চরণ থাকে। প্রথম দু’টি চরণ- ‘রঙ পদ’, দ্বিতীয় দু’টি চরণ- ‘মূল পদ’।
আগে মূর্তি পুজোর প্রচলন ছিল না। প্রকৃতির উপাসনা করতেন ‘প্রকৃতির সন্তান’রা। এখন ‘টুসু মূর্তি’র পুজো হলেও অনেকেই আজও ‘মূর্তি’ পুজোয় বিশ্বাসী নন। শস্যের দেবী’র পুজোয় ব্যবহৃত হয় কাগজের ‘কল্কা’। পুজোর পরে পৌষ সংক্রান্তি’র সকালে কল্কা বা মূর্তি বিসর্জন দেওয়ার পরে দেওয়া হয় ‘মকর ডুব’।
আর মুখে তুলে নেওয়ার জন্য থাকে রকমারি পিঠে। তালিকায় কী নেই? গুড় থেকে মাংস, পিঠেপুলি- বাদ যায় না কিছুই। গ্রামে গ্রামে বসে মেলা, মোরগ লড়াই প্রতিযোগিতা। অন্যান্য বারের মত এবারেও দিনটি পালিত হল স্বতন্ত্র ভাবে।