নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিনই কলকাতা থেকে পঞ্চনদের দেশ পঞ্জাবে(Punjab) উড়ে যাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। পরের দিন সকালে অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির দর্শনে যাবেন। সেদিনই আবার থাকছে পঞ্জাবের আপ(AAP) নেতাদের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক বৈঠক। পঞ্জাবে এই প্রথম মমতা যাচ্ছেন না। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময় থেকেই মমতার পঞ্জাব গিয়েছেন একাধিকবার। সেখানে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তাও রয়েছে। যতবারই মমতা পঞ্জাবে গিয়েছেন ততবারই তিনি স্বর্ণমন্দির দর্শনে গিয়েছেন। এবারেও যাবেন। তাই সেটা বাড়তি উৎসাহের কারণ হয়ে উঠছে না। বাড়তি নজর কাড়ছে পঞ্জাবের ক্ষমতায় থাকা আপ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক। কেন বৈঠক? তা জানা যাচ্ছে না। তবে অনুমান পঞ্জাবে প্রার্থী দিতে পারে তৃণমূল। সেই সূত্রেই আলোচনার জন্য খোদ মমতা যাচ্ছেন পঞ্জাবে।
দেশের ২৪’র ভোটের আবহে গড়ে উঠেছে বিজেপি বিরোধী জোট INDIA। সেখানে কংগ্রেসের পাশাপাশি আছে তৃণমূল এবং আপ। কিন্তু তৃণমূলের বাংলা এবং আপের পঞ্জাব ও দিল্লিতে দুই দলের সঙ্গে কংগ্রেসের কার্যত কোনও আসন সমঝোতা হচ্ছে না। বাংলায় মমতা কংগ্রেসকে ২টি আসন ছাড়তে রাজী হলেও রাহুল গান্ধির দল ১০ থেকে ১২টি আসন দাবি করেই শুধু থেমে থাকেনি, প্রতিনিয়ত প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আক্রমণ শানিয়ে চলেছে তৃণমূলকে। এই অবস্থায় মমতাও জানিয়ে দিয়েছেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার মাটিতে বিজেপির বিরুদ্ধে একাই লড়বে তৃণমূল(TMC)। রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দেবে জোড়াফুল। আবার পঞ্জাবের ক্ষেত্রেও আপ জানিয়ে দিয়েছে তাঁরা একাই লড়বে সেখানে। দিল্লিতে তাঁরা ১টি আসন ছেড়েছে কংগ্রেসকে যা রাহুল গান্ধির পছন্দ নয়। সম্ভবত কংগ্রেসও পঞ্জাব ও দিল্লিতে সব আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পথে এগোচ্ছে। সব মিলিয়ে INDIA ভেঙে পড়ার মুখে। এই অবস্থায় আঞ্চলিক দলগুলির বিকল্প একটি জোট সম্ভাবনা আগেই উঁকি দিয়েছিল। কেননা মমতা নিজেই জানিয়েছিলেন দেশে ২৪’র ভোটের পরে আঞ্চলিক দলগুলি কেন্দ্রে সরকার গড়বে। সেই ঘোষণা যে নিছক ঘোষণা নয়, সেটা মমতার পঞ্জাব যাত্রাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের বুকে INDIA জোটের আরেক শরিক সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত হয়েছে। সমাজবাদী সুপ্রিমো অখিলেশ সিং যাদব নিজে মমতাকে অভিযোগ করেন কংগ্রেসের জোট বিরোধী মানসিকতা ও দুর্ব্যবহার নিয়ে। অখিলেশ কংগ্রেসকে ১১টি আসন ছাড়তে রাজী হলেও কংগ্রেসের দাবি দিতে হবে ৩১টি আসন। সেই দাবি মানতে রাজী নন অখিলেশ। তবে তিনি সেখানে ১টি আসন ছেড়েছেন তৃণমূলকে। এবার মমতা পঞ্জাবে যাচ্ছেন। যদি সেখানে আপের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসু হয় তাহলে সেখানেও ১টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে তৃণমূল যাকে সমর্থন করবে আপ। এম্নিতেই আপ নেতৃত্ব পঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানা ও চন্ডীগড় মিলিয়ে মোট ৩১টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেখান থেকে জোটের স্বার্থে তাঁরা ১টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তেও চেয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস যদি একক ভাবে এই ৩১টি কেন্দ্রে প্রার্থী দেয় তাহলে দুই দলের মধ্যে আর জোট বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
তাই কংগ্রেসের জন্য যে ১টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত আপ নেতৃত্ব নিয়েছিল সেই ১টি আসন তাঁরা তৃণমূলকে ছাড়তে কোনও দ্বিদ্ধাবোধ করবে না। তবে সেই আসন দিল্লিতে নয়, পঞ্জাবে ছাড়া হবে। সেই সঙ্গে INDIA জোটের বিকল্প একটি জোট গড়ে তোলার প্রয়াসও শুরু হয়ে গেল যেখানে নেতৃত্ব দেবেন বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জোটে তাঁর কথাই মেনে নেবেন সকলে। সেই জোটে থাকতে পারে তৃণমূলের পাশাপাশি আপ এবং সমাজবাদী পার্টিও। সম্ভবত তাতে তেলেঙ্গানার বিআরএস-অ সামিল হতে পারে। জল্পনা আছে উদ্ধভ ঠাকরের শিবসেনা এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টই নিয়েও। এমনকি বামপন্থী দল সিপিআই(এমএল)-ও তাতে যোগদান করতে পারে বলেই জল্পনা আছে। সব মিলিয়ে কংগ্রেসকে বড়সড় চ্যালেব্জের মুখে ফেলে দিতে চলেছে এই আঞ্চলিক দলগুলির নয়া জোট। সূত্রে জানা গিয়েছে পঞ্জাবের বৈঠকে যোগ দিতে পারেন সে রাজ্যের আপ মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এবং আপ সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। যোগ দিতে পারেন অখিলেশ যাদব এবং উদ্ধভ ঠাকরেও।