নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশ এগোচ্ছে, বিশ্ব এগোচ্ছে, মানুষের মানসিকতায় বদল আসছে, বদলে যাচ্ছে তাঁদের জীবনধরণের পদ্ধতি, ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বদলাচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও। অথচ মোদি সরকারের(Modi Government) মানসিকতায় কোনও বদল ঘটছে না। ৫০ বছর আগে সঙ্ঘের নেতারা যে মনোভাব পোষণ করতেন এখনও তাঁরা সেই অভিমতই পোষণ করেন। শুধু তাই নয়, দেশের শীর্ষ আদালতের কোনও রায় বা পদক্ষেপ তাঁদের নিজেদের পছন্দ না হলে তাঁরা যে কটুভাবে আক্রমণ শানতেও পিছুপা হবেন না সেটাও মোদি সরকারের নেতামন্ত্রীরা নানান সময়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ঠিক সোমবার রাজ্যসভায়(Rajya Sabha) দাঁড়িয়ে দেশের শীর্ষ আদালতকে আক্রমণ শানিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সুশীল মোদি(Sushil Modi)। সমলিঙ্গের বিয়ে নিয়ে মোদি সরকারের নেতিবাচক মনোভাবে যে কোনও বদল ঘটেনি তা বুঝিয়ে দিতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের(Supreme Court) বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভারতীয় সামাজিক মূল্যবোধ সমলিঙ্গ বিয়ে(Same Sex Marriage) অনুমোদন করে না। এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া বিচারবিভাগের এক্তিয়ারে পড়ে না। মাত্র দু’জন বিচারপতি মিলে এমন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।’
আরও পড়ুন মমতার সরকারকে স্বস্তি দিয়ে শুনানি পিছিয়ে গেল ডিএ মামলার
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট সমকামিতাকে আইনি অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পরে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু সে সময় মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ব্রিটিশ আমলে তৈরি ১৮৬১ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সমকামী যৌন সম্পর্ককে অপরাধের তকমা দেওয়া হয়েছিল। একে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চের ওই রায়ে বলা হয়েছিল, ৩৭৭ ধারা সমকামীদের সমানাধিকারের বিরোধী। তাই দেশের আইনে এখনও ৩৭৭ ধারা থেকে গেলেও সমকামিতাকে সেই অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ঐতিহাসিক রায় যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ ও গেরুয়া শিবিরের মনোভাবের ক্ষেত্রে কোনও বদল ঘটাতে পারেনি সেটাই বার বার দেখিয়ে দিচ্ছেন মোদি সরকারে নেতামন্ত্রীরা।
আরও পড়ুন আবারও ভারতসেরা মমতার দুয়ারে সরকার প্রকল্প
দু’বছর আগে একটি জনস্বার্থ মামলার জেরে দিল্লি হাই কোর্ট সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের মত জানতে চেয়েছিল। সে সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতকে জানিয়েছিলেন, ১৯৫৬-র হিন্দু বিবাহ আইনের আওতায় সমলিঙ্গের বিয়েকে নথিবদ্ধকরণের আইনি অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তাবে কেন্দ্রের সায় নেই। তারপরেও সম্প্রতি আরও একটি আবেদন জমা পড়ে দেশের শীর্ষ আদালতে। সেখানেও সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি বৈধতা দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। সেই মামলা প্রসঙ্গেই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের অভিমত জানতে চেয়েছিল। সেই বিষয়েই সোমবার রাজ্যসভায় সুশীল জানান, ‘তথাকথিত কিছু উদারপন্থী এ বিষয়ে অন্ধ ভাবে পশ্চিমী সংস্কৃতি অনুকরণ করতে চাইছে। সমলিঙ্গে বিয়ে সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করবে। শুধু বিচারবিভাগের হাতে এ সংক্রান্ত দায়িত্ব ন্যস্ত না করে সংসদে বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিতর্কেরও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। মাত্র দু’জন বিচারপতি মিলে এমন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।’ যদিও দেশের আইনজীবী মহলের দাবি, সুশীল মোদি যে দাবিই করুন না কেন আর মোদি সরকার যে মনোভাবই নিয়ে চলুক না কেন, সুপ্রিম কোর্টের কাছে তা গুরুত্ব পেলেও তার রায়ে তা প্রতিফলিত হবে না। কৃষি বিল নিয়ে কী হল তা আশা করা যায় মোদি সরকার ভুলে যায়নি। তাই তাঁরা যে অবস্থানই নিক না কেন, দেশের প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট কখনই পিছু পা হবে না।