নিজস্ব প্রতিনিধি: হাতে আর মাত্র ১০ মাস সময়। তারপরেই দেশের অপর বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য ত্রিপুরার(Tripura) মাটিতে বেজে উঠবে বিধানসভা নির্বাচনের রণদামামা। কিন্তু সেই নির্বাচন ঘিরেই এখন কালো মেঘ ঘনিয়েছে বিজেপির অন্দরে। শনিবার আচমকা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন বিপ্লব দেব(Biplab Deb)। প্রাথমিক ভাবে সেই ইস্তফা দেওয়ার সময় একট ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল যে কেন এভাবে আচমকা পদত্যাগ করে দিলেন বিপ্লব! পরে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই ইস্তফা দিয়েছেন বিপ্লব। সেটা তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়ও ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, ‘দল আমাকে যেখানে যে কাজের জন্য ভাববে, আমি তাতেই রাজি। দল জানিয়েছে, সংগঠন দেখতে হবে। সেই কাজই করব আপাতত।’ তবে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবারই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের(Amit Shah) সঙ্গে বৈঠক করেন বিপ্লব। সেখানেই তাঁকে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরেই আজ পদত্যাগ করেন বিপ্লব।
২০১৮ সালে ত্রিপুরায় দখলের পরেই বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি(BJP) নেতৃত্ব। উপ-মুখ্যমন্ত্রী হন জিষ্ণুদেব বর্মা। কিন্তু প্রথম থেকেই বিপ্লবের সঙ্গে ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়কদের বিবাদ বার বার ঘটেছে, আর তা সামনেও এসেছে। বিপ্লবের সঙ্গে বিবাদ ঘটেছে ত্রিপুরার বিজেপির নেতা থেকে সাংসদদেরও। বিপ্লব দেবের সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ত্রিপুরার আমজনতার মধ্যেও প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠক বসতে চলেছে। মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই পরের মুখ্যমন্ত্রীর নাম স্থির করে ফেলেছে। পরিষদীয় দল সেই নামে শুধু মাত্র সিলমোহর দেবে। কিন্তু কী এমন হল যে বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র ১০ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী বদলে ফেলতে হচ্ছে বিজেপিকে? আর এখানেই উঠে আসছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চোখ এড়িয়ে যায়নি।
প্রথমত, বিপ্লব দেব ত্রিপুরার ভূমিপুত্র নন। এমনকি সেই রাজ্যের দীর্ঘকাল ধরে রাজনীতি করা লোকও নন। আর সেই কারণেই তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে যতটা না চমক দেখা গিয়েছে তার থেকেও অনেক বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিপ্লব চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন। দলের বর্ষীয়ান নেতা থেকে শুরু করে নিজ ক্যাবিনেট মন্ত্রী মায় দলের বিধায়কদের কথাও শুনতেন না, কানে তুলতেন না, গুরুত্ব দিতেন না। সেই জায়গা থেকে দলে ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি দলে বিদ্রোহ থেকে দলত্যাগ পর্যন্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল। সংগঠন ধ্বসে পড়ছিল। এইসব কিছুই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট আকারে পৌঁছেছিল। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন বিপ্লবকে সামনে রেখে ভোতে গেলে ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত। তাই সময় থাকতে থাকতেই পদক্ষেপ করলেন তাঁরা। তৃতীয়ত, অবশ্যই ত্রিপুরার রাজনীতিতে তৃণমূলের(TMC) আত্মপ্রকাশ। ত্রিপুরার মাটিতে একের পর এক কর্মসূচি নিচ্ছে তৃণমূল। নিত্যদিন গ্রামে গ্রামে গিয়ে, পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে তাঁরা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছেন। তাঁদের কথা শুনছেন, অভাব-অভিযোগ শুনছেন। আর তার জেরে তৃণমূলের সভা থেকে মিছিলে ভিড় ক্রমশই বেড়ে চলেছে যা বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেভাবে শতাধিক আর্থসামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে আমজনতার পাশে দাঁড়িয়েছে, তাঁদের উন্নয়ন ঘটিয়েছে সেই সুযোগ সুবিধা কিন্তু ত্রিপুরার মানুষ পান না। আর এখানেই তৃণমূলকে ঘিরে ত্রিপুরার মাটিতে উৎসাহ ও উদ্দিপনা বাড়ছে। বিজেপির ধারনা আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ভাল ভোট পেয়ে গেলে এবং বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব না কমলে তাঁদের পরাজয় সুনিশ্চিত। তাই কিছুটা হলেও তৃণমূলকে ঠেকাতে ত্রিপুরায় বিপ্লবের গদি কাড়ল বিজেপি।