নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং: বারোয়ারি পুজোর চেয়ে বনেদিবাড়ির পুজোর নিয়মে বেশ কিছু ফারাক দেখা যায়। আবার এক এক বাড়ির এক এক নিয়মও রয়েছে। দেবী দুর্গার বর্ণেও রয়েছে পার্থক্য। কোথাও গৌরবর্ণা হলেও কোথাও আবার শ্বেতবর্ণ, কোথাও আবার রক্তবর্ণ। কিন্তু কৃষ্ণবর্ণের দুর্গা প্রতিমা পূজিত হয় শুধুমাত্র উত্তর ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়িতেই। এর নেপথ্যে রয়েছে পরিবারিক ইতিহাস।
ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের পাইনখাড়া গ্রামে। ১৫৮৫ সালে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৪৩৫ বছর আগে। সেসময় গৌরবর্ণা দুর্গারই পুজো হত। দুর্গার কালো রূপের পুজো হচ্ছে ২২০ বছর ধরে। দেশভাগের পর ১৯৩৮ সালে ভট্টাচার্য পরিবার চলে আসে ক্যানিং শহরে। তবে ক্যানিংয়ে চলে এলেও পুজোর সময় ক্যানিং থেকে সপরিবারে বাংলাদেশের বিক্রমপুরের পাইনখাড়া গ্রামে গিয়ে পুজো করে আসতেন সদস্যরা। ক্য়ানিয়ে পুজো হচ্ছে গত ৭৪ বছর ধরে। ওপার বাংলায় পুজোর সূচনা হওয়ায় দেবী দুর্গার বাঁ দিকে গণেশ ও সরস্বতী থাকেন। ডানদিকে থাকেন কার্তিক ও লক্ষ্মী।
তবে দুর্গার কালো রঙের নেপথ্যের কারণ কী? পরিবারের বর্তমান সদস্যরা জানান, প্রায় ২২০ বছর আগে দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন ঘটে যায় একটি দুর্ঘটনা। দুর্গামণ্ডপের পাশের মনসা মন্দিরের জ্বলন্ত প্রদীপের শিখা থেকে একটি কাক জ্বলন্ত সলতে নিয়ে মণ্ডপের উপর বসে পড়ে। সোনা দিয়ে তৈরি দুর্গামণ্ডপের চালা ঘরেও সেই সলতের আগুন লেগে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই সেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় সমগ্র পুজোমণ্ডপকে। রক্ষা মেলেনি স্বয়ং দেবী দুর্গাপ্রতিমারও।
পরিবারের সদস্য়রা জানান, আগে পুজোর সময় প্রতিবছর মোষ বলি দেওয়ার রীতি ছিল। কিন্তু মায়ের স্বপ্নাদেশেই সেই বলিপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয় ৬৪ বছর আগে। বিসর্জনের সময়ও রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম। প্রথমত, রীতি মেনেই দশমী তিথিতেই দুর্গার বিসর্জন হয় ভট্টাচার্য বাড়িতে। তবে বিসর্জনের পর প্রতিমা জলের তলায় তিনদিন পুঁতে রাখা হয়, যাতে প্রতিমা গভীর জল থেকে উপর ভেসে না ওঠে। এরপর সেই কাঠামো তোলা হয় লক্ষ্মী পুজোর পরের দিন। একবছর ওভাবেই রেখে দেওয়ার পর ফের ওই কাঠামোতেই গড়ে ওঠে কালো দুর্গা প্রতিমা।