নিজস্ব প্রতিনিধি: নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা লড়াই করতে নামেন জেতার লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু সেই লড়াইয়ের আগেই যে কোনও দল হেরে বসে যেতে পারে এর সব থেকে বড় উদাহরণ অবশ্যই বিজেপি। এক তো তাঁরা কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারেনি, তারওপর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলের প্রার্থীদের সামনে মাত্র ১০টি আসনে জেতার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে দিয়েছিলেন। কোনও নির্বাচনের আবহে দলের কোনও নেতা এত কম সংখ্যক আসন জেতার জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করে দিতে পারেন সেটাই এতদিন কারোর দেখা ছিল না, জানাও ছিল না। কার্যত শুভেন্দুর সেই ঘোষণা প্রমাণ করে দিয়েছিল বিজেপি আদতে লড়তে নামছে না, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ভোট ময়দানে অবতীর্ণ হচ্ছে। ফলাফলেও কার্যত তারই ছায়া পড়ল। শহর কলকাতায় জমি হারালো বিজেপি। ২০১৫ সালে যারা ৭টি আসনে জয়ী হয়েছিল এবার তাঁরা কার্যত অর্ধেকে নেমে এসেছে। মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে তাঁদের জয় হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে শুভেন্দুর মাত্র ১০টি আসনে জেতার লক্ষ্যমাত্রাকেও।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলা থেকে পেয়েছিল ১৮টি আসন। তার জেরেই রাজ্যজুড়ে হাওয়া উঠেছিল এবার বিজেপির হাত ধরেই বাংলায় ঘটবে পরিবর্তন। সেই দাবি যত না বাস্তব ছিল তার থেকে ঢের গুণ বেশি মিথ্যায় ভরপুর ছিল। প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষা, বাঙালিয়ানা, বাংলা সাহিত্য, বাংলার কৃষ্টি, বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করে, খাটো করে বিজেপির নেতারা বাংলা দখলের হুঙ্কার দিয়েছিলেন। কেন্দ্রের শাসক দল কার্যত সর্বশক্তি দিয়ে বাংলা দখলের পথে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু বাংলার মানুষ সব প্ররোচনা, সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভরসা রেখেছেন বাংলার নিজের মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরেই। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ আস্থা রেখেছেন তৃণমূলের ওপরেই। আর সেই আস্থার ধাক্কায় বিজেপির অন্দরমহল ভেঙে চুরমার। সংগঠনের হাল তো আরও খারাপ। সেই ভাঙা সংগঠন নিয়েই মাঠে নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু কলকাতার মানুষ আর তাঁদের সুযোগ দিতে রাজি হয়নি। সাড়ে ছয় বছর আগে ২০১৫ সালের কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে বিজেপি ৭টি আসন জিতেছিল। কিন্তু এবারে তাঁদের মুখরক্ষা হল মাত্র ৩টি আসন পেয়ে।
তবে কলকাতা পুরনির্বাচনে সব থেকে চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে বিজেপির দিক থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট। অথচ মাত্র ৭ মাসের মধ্যে কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচবনে তাঁদের প্রাপ্তি ৮ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ ৩১ শতাংশ মানুষ বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অথচ এই সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাম আর কংগ্রেস উভয়েই। রাজ্য বিধানসভা থেকে দুই দলই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বামেরা এবার কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, শহরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে হয় বাম নয় কংগ্রেস। বিজেপি সেখানে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। এই ছবিটাই কিন্তু বলে দিচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতেও এবার বড় ধাক্কা খেতে চলেছে বিজেপি। ক্রমশ জমি হারাচ্ছে তাঁরা। আগামী দিনেও যে সব নির্বাচন হবে বাংলায় সেখানেও এই ছবি ফুটে ওঠার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ২০২৪ সালে বিজেপি ১৮টি আসনের সবকটি ধরে রাখতে পারবে তো! সম্ভাবনা কিন্তু অন্য কথাই বলছে। যে দ্রুত হারে বিজেপি জমি হারাচ্ছে তাতে করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে হয়তো আর কাউকে জিতিয়ে দিল্লি পাঠাতে পারবে না বিজেপি।