এই মুহূর্তে




নাট্য ব্যক্তিত্ব থেকে টলিউডের ‘বাঞ্ছা’ হয়ে ওঠা, লড়াইটা সহজ ছিল না মনোজ মিত্রের




নিজস্ব প্রতিনিধি: মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালেই চলচ্চিত্র জগতের ইন্দ্রপতন। আজ সকাল ঠিক ৮:৫০ মিনিট নাগাদ প্রয়াত হয়েছেন নাট্য কিংবদন্তি মনোজ মিত্র। তাঁর মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকের ছায়া টলিউডের অলি-গলি। শোকের ছায়া নেমে এসেছে নাট্য জগতেও। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন মনোজ মিত্র। দুর্গা পুজোর সময়েও তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চলতি বছরে অনেকবার তাঁকে বুকে ব্যথার জন্যে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সুস্থ করিয়ে তাঁকে বাড়িতেও নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসায় তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতেই তাঁর বুকে পেসমেকার বসানো হয়েছিল। সেই সময়ে কিংবদন্তির মৃত্যুর একাধিক ভুয়ো খবর ছড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অভিনেতার ভাই বিষয়টিতে কর্ণপাত করেন। কিন্তু এবার আর ভুয়ো নয়। সত্যি সত্যিই থামল তাঁর প্রাণ, আজ সকালেই ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে অভিনেতা। অভিনেতার ভাই অমর মিত্রই বিষয়টি প্রথম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। স্বর্ণালী সময় থেকেই টলিউডে রাজত্ব করছেন মনোজ মিত্র। কখনও নেগেটিভ কখনও পজিটিভ দুই চরিত্রেই তিনি সমান মানানসই ছিলেন। যদিও তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল নাট্য জগত থেকেই। শুধু অভিনয় নয়, তাঁর লেখা নাটকগুলিতেও ছিল কৌতুকমিশ্রিত নৈর্ব্যক্তিকতা।

‘সাজানো বাগান’ থেকে ‘নরক গুলজার’-সবকটি নাটকই মনোজ মিত্রের লেখা। আসলে অভিনয় জগতের বিচিত্র স্বাদ শৈশবেই চিনতে পেরে ছিলেন অভিনেতা। ১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলার সাতক্ষীরা ধূলিহর গ্রামে মনোজের জন্ম। তিনি তাঁর বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান ছিলেন। তাঁর বাবা অশোক কুমার মিত্র ছিলেন একজন শিক্ষক, পাশাপাশি আইনজীবীও। বাবার কাজের সূত্রেই শৈশবে নানা জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। তাঁর পরিবারে অভিনয় খুব একটা পছন্দ করতেন না কেউই, আর শৈশবে নিজের গ্রামে থাকতেই একটু উৎসবে প্রথম অভিনয় করেন মনোজ মিত্র। তাও আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাসির নাটক ‘রোগের চিকিৎসা’-তে। তবে ১৯৫০ সালে একেবারেই বাংলায় চলে আসেন অভিনেতা। এরপর স্কুল জীবন থেকেই থিয়েটারচর্চা শুরু হয় তাঁর। ১৯৫৪ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন অভিনেতা। তখন থেকেই মনোজ ছোটগল্প লিখতে শুরু করেন। এরপর দর্শন অনার্স নিয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। এরপর তিনি বন্ধু পার্থ প্রতিম চৌধুরীর হাত ধরে ‘সুন্দরম’ নাট্যদল শুরু করেন। এরপর থেকেই অভিনয় পর্ব শুরু তাঁর। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। তখনই একেবারে জোর কদমে নাটক লিখতে শুরু করেন মনোজ মিত্র। নাটক পাগল ব্যাক্তিত্ব ছিলেন তিনি।

তাঁর প্রথম নাটক হলো ‘মৃত্যুর চোখে জল’। মনোজ মিত্র প্রাথমিক জীবনে উত্তর কলকাতার বাসিন্দা হলেও পরবর্তীকালে সল্টলেকে তাঁর পাকাপাকি আস্তানা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক মেয়ের ময়ূরীর বাবা। মনোজ মিত্র পেশাগত জীবন শুরু করেন দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে। এরপর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে র নাট্যবিভাগের অধ্যাপনা শুরু করেন তিনি। এরপর আরও একটি নাট্যদল গঠন করেছিলেন মনোজ মিত্র। যার নাম ঋতায়ণ। এরপর ১৯৭৭ সালে মনোজ মিত্র লেখেন ‘সাজানো বাগান’, আর নিজের নাটকে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি নিজেই। নাটকটি নাট্য জগতের অন্যতম উপহার। ১৯৮০ সালে তপন সিংহ পরিচালিত ‘বাঞ্ছারামের বাগান’- দিয়ে টলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন অভিনেতা। সেখানেই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিলেন অভিনেতা। এরপর থেকেই শুরু তাঁর টলিউডে পথচলা। ছবিতে অশীতিপর বৃদ্ধ বাঞ্ছারামের চরিত্রে অভিনয় করবে তিনি, ছবিতে দেখানো হয়েছিল তিনি তাঁর নিজহাতে গড়া ফুল-ফলের বাগান নিয়ে অবসেসড। নিজের প্রাণের চাইতেও প্রিয় সেই বাগান। ছবিতে বাঞ্ছারামের চরিত্রে জীবন্ত করে তুলেছিলেন অভিনেতা। তাঁর অভিনয় জীবনের এক মাইলস্টোন এই ‘বাঞ্ছারাম’। টলিউডে উৎপল দত্তের পরে অন্যতম খলনায়কের চরিত্রে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন মনোজ মিত্র। একাধিক কমার্শিয়াল বাংলা ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে তাঁর যাত্রাপথ খুব একটা সহজ ছিলনা। ‘চাক ভাঙা মধু’ সিনেমা থেকে তার টলিউডে আত্মপ্রকাশ।

অনেক পরিশ্রম করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন মনোজ মিত্র। তবে ‘টাইপ কাস্টিং’ ভেঙে বেরিয়ে এসে তপন সিংহের ‘হুইলচেয়ার’-এর শতদল চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শককে নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছিল। এমনকী শেষ বয়সে চরম অসুস্থতা নিয়েই নাট্য মহলে হাজিরা দিচ্ছিলেন অভিনেতা। সেরা নাট্যকার হিসেবে পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পুরস্কার, এশিয়াটিক সোসাইটির স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ থিয়েটার সোসাইটি প্রদত্ত ‘মুনির চৌধুরী পুরস্কার’। ২০১৯ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। অবশেষে ৮৬ বছর বয়সে থামল তাঁর জীবন। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আজই অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর মৃত্যুতে নাট্যজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই ক্ষত হয়তো কোনদিনই পূরণ হবেনা। কিন্তু তাঁর স্মৃতিচিহ্ন গুলির মাধ্যমে চিরকাল বাঙালির মনে অমর থাকবেন অভিনেতা। রবিন্দ্র সদনে তাঁর মৃতদেহ রাখা হবে। দুপুর ৩ টে নাগাদ গান স্যালুটে বিদায় জানানো হবে তাঁকে। উত্তরবঙ্গ সফর থেকে জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনোজ মিত্রের মেয়ে জানিয়েছেন, তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে চোখ দান করে গিয়েছেন।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

মুম্বইতে মেলেনি বড় সুযোগ, তাই কী বাংলা ধারাবাহিকে কামব্যাক ঊষসীর? উত্তর দিলেন নায়িকা

ভোপালের সরকারি শুটিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আত্মঘাতী ১৭ বছর বয়সী ছাত্র

পরনে লাল টুকটুকে শাড়ি, বিয়ের আগে ‘পেল্লি কুথুরু’ সম্পন্ন শোভিতা ধুলিপালার

‘আমরা সবাই রাজা, আমাদের রাজার রাজত্বে’, রিলিজ হল ‘খাদান’-এর প্রি-ট্রেলার

মুক্তির আগেই ভবিষ্যদ্বাণী, প্রথমদিনেই বিশ্বব্যাপী ২৭৫ কোটি আয় করবে ‘পুষ্পা 2’

ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, প্রেমিকের ১২ লাখি স্কুটিতে চেপে হেলমেট ছাড়াই ঘুরে বেড়ালেন তৃপ্তি

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর