নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন টলিউড অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর জিত হয়নি। বিজেপি প্রার্থী নীলাদ্রিশেখর দানা-র কাছে হেরে যান তিনি। তবে ভোটে হেরে গেলেও তিনি তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এমনকি তাঁকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকও করা হয় তাঁকে। বছরের বেশিরভাগ সময়েই বাঁকুড়ায় কাটত তাঁর। সুতরাং আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া লোকসভা থেকেটিকিট পাবেন সায়ন্তিকা, সেটাই নিশ্চত ছিলেন তিনি। কিন্তু আশাভঙ্গ হল নায়িকার। লোকসভার ভোট যুদ্ধে টিকিট পেলেন না তিনি। শেষমেশ প্রার্থী করা হলনা তাঁকে। তাই একপ্রকার হতাশ হয়ে তৃণমূলের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবারেই (১০ মার্চ) তিনি দলকে পদত্যাগপত্রও পাঠিয়ে দিয়েছেন। গতকাল ১০ মার্চ ব্রিগেডে হয়ে গেল তৃণমূলের ‘জনগর্জন’ সভা। জনগনকে সাক্ষী রেখেই অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন। যেখানে বাদ পড়ল একাধিক পুরোনো নাম, আর এন্ট্রি নিল একাধিক নতুন নাম। পরতে পরতে চমক দিল তৃণমূল। তারকাদের মধ্যে নয়া সংযোজন বাংলার দিদি নং ১ রচনা বন্দোপাধ্যায়ের নাম। আর দীর্ঘ জল্পনার পরেও তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটবন্ধন আরও শক্ত করলেন টলিউড সুপারস্টার দীপক অধিকারী তথা দেব। এছাড়াও তারকাদের মধ্যে আরও প্রার্থী হলেন সায়নী ঘোষ, শতাব্দী রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়া। বাদ গেলেন আরও ২ টলিউড সুন্দরী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। যদিও মিমি আগেই ঘোষণা করেছিলেন তিনি আর রাজনীতিতে থাকবেন না, আগেভাগেই ইস্তফা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এবার সেই তালিকায় যোগ হলেন সায়ন্তিকা বন্দোপাধ্যায়। এদিন প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর সকল প্রার্থীদের সঙ্গে র্যাম্পওয়াকও সারলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা কিনা রীতিমতো নজির সৃষ্টি করল।
কিন্তু এদিন প্রার্থী তালিকায় অনেক নতুন নাম থাকলেও নাম নেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা অভিনেত্রী সায়ন্তিকার। তাই হতাশ হয়ে রবিবারেই নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন।
তিনি সুব্রত বক্সীকে চিঠিতে লিখলেন, “প্রথমেই আপনাকে এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের সুপ্রিমো মা-মাটি-মানুষের নেত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’কে জনগর্জন সভার সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাই। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দলের সর্বাঙ্গিক সাফল্য কামনা করি। আমি গত ৩ বছর ধরে, দলের সামগ্রিক রাজনৈতিক-প্রতিবাদী এবং উন্নয়ন কর্মসূচির সাথে সামগ্রিক ভাবে জড়িত ছিলাম। দলের সুনির্দিষ্ট পার্টি লাইন অনুসরণ করে সমস্ত কর্মসূচি’তে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। এই পর্যায়ে, আমি দলের সমস্ত রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত একান্তই ব্যক্তিগত কারণবশত।”
রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে তিনি এসেছিলেন, প্রথম থেকে তাঁকে বেশ চনমনেই দেখাচ্ছিল। কিন্তু যখন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়, বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করলেন তখনই হতাশায় মুখ ঢেকে যায় সায়ন্তিকার। তাই সভা শেষে জাতীয় সঙ্গীতের আগেই ফোনে কথা বলতে বলতে মঞ্চ থেকে নেমে যান সায়ন্তিকা। এরপরেই রাতে ইস্তফা দিলেন নায়িকা। অন্যদিকে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে টিকিট না পেয়ে অর্জুন সিংহও ক্ষুব্ধ। বর্তমানে অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক মঞ্চেও তারকাদের ভিড় জমানো কমন ব্যাপার। রাজনীতিতেও কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন অসংখ্য তরুণ তারকারাও। যে তালিকায় বাদ নেই টলিউড থেকে বলিউড, ভোজপুরি, মারাঠা ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের নাম। যদিও এই বিষয়ে বোধহয় প্রথমেই নাম যায় টলিউডের। বাংলার শাসনভার হাতে তোলার পর থেকেই তৃণমূলের হাত ধরেছেন অসংখ্য টলিউড তারকারা।
তবে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সফল হয়েছেন, আবার কেউ ক্ষুব্ধ হয়েই রাজনীতি কেরিয়ার চুকিয়ে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ সুযোগ পেয়েই দলবদল করে নিয়েছেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন, এ বছর বাংলার তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে কে কে লোকসভা নির্বাচনে লড়বেন, তা নিয়েই বহুদিন ধরে পাখির চোখ ছিল রাজ্যবাসীর। গত ২ মার্চেই বিরোধী দল বিজেপি তাঁদের অর্ধেক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদেরও পাখির চোখ ছিল তৃণমূলের দিকে, এবার তৃণমূলের চমক দেখে খুব শীঘ্রই বাকি বাহিনী নিয়ে মাঠে নামবে বিরোধী দল বিজেপি।