এই মুহূর্তে




চাকরির ফাঁদ! রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকাঃ চাকরির টোপ দেখিয়ে রাশিয়ায় পাচার করা হচ্ছে বাংলাদেশের বহু তরুণকে, সেখানে গিয়ে জোরপূর্বক তাদের রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিপদে বাংলাদেশের বহু পরিবার। জানা যাচ্ছে, চাকরি ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে সহজেই তরুণদের কাবু করা যাচ্ছে। সেই প্রলোভনেই পা দিয়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে বহু বাংলাদেশি নাগরিক। কখনও মস্কোর শপিং মলে সেলসম্যান, কখনও সিকিউরিটি গার্ড, রেস্তোরাঁ গুলিতে শেফসহ বিভিন্ন পদে মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি দুই-তিন বছর চাকরি করার পর রাশিয়ার নাগরিকত্ব প্রদান এবং বাবা-মা, ভাই-বোনকেও রাশিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে ভিন দেশে তাদের পাচার করা হচ্ছে। প্রলোভনে পড়ে শত শত বাংলাদেশি তরুণ-যুবক দুবাই, সৌদি আরব অথবা তুরস্ক হয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে পৌঁছে যাচ্ছে। এরপর তাদের গাড়িতে করে মস্কো থেকে ১০০-১৫০ কিলোমিটার দূরে রাজধানীর বাইরে জনমানবহীন এক এলাকায় অবস্থিত রাশিয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এরপর শুরু হয় তাদের ‘মোটিভেশনের’ কাজ। তখনই বাংলাদেশি তরুণরা বুঝতে পারে তাদের একটি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে মাসে চার লাখ রুবল পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে তাদের রাশিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আর এই প্রস্তাবে রাজি না হয়েও কোনও উপায় নেই, কারণ এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তাও বন্ধ। তাইতা জীবনের মায়া ত্যাগ করে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করতে হচ্ছে তাদের। এমনই একটি মানব পাচার চক্র গোটা বাংলাদেশে ভরে গিয়েছে। ঢাকার মানব পাচার সেল জানিয়েছে, ঢাকাভিত্তিক একটি সংস্থা ড্রিম হোম ট্রাভেল এমন প্রলোভন দেখিয়েই গত দুই বছরে প্রায় ২০ জন বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় পাচার করেছে। প্রথমে তারা তাদের ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে পাঠায়। সেখান থেকে রাশিয়ার মস্কোতে পাচার করা হয়। মস্কোতে সুলতান নামে এক বাংলাদেশির কাছে তাদের বিক্রি করা হয়। সুলতান তাদের রাশিয়ান সৈন্যদের হাতে তুলে দেয়। এবং রাশিয়ার হয়ে তাদের ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়।

প্রত্যাখ্যান করলেই তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এমনকী ওই ২০ জনের মধ্যে তিন জনকে ইতিমধ্যেই হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের ২৫ বছর বয়সি আকরাম হোসেন। যিনি ৯ মাস আগে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। আত্মীয়দের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা ধার করে আকরামকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন তাঁর পরিবার। কিন্তু রাশিয়ায় গিয়ে আকরামকে ‘চুক্তিবদ্ধ যোদ্ধা’ হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ১৫ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণের পর আকরামকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। এছাড়া নিহতদের মধ্যে আরেকজন হলেন, ময়মন সিংহের গৌরীপুরের ইয়াসিন মিয়া শেখ। যিনি গত বছর দালালের মাধ্যমে রাশিয়ায় গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইয়াসিন নিহত হয়েছেন। এছাড়া নাটোরের সিংড়ার হুমায়ুন কবীরও নিহত হয়েছেন। তার ভগ্নীপতি রহমত আলী এখনও রাশিয়ায় আটকে রয়েছেন। যশোরের জাফর হোসেনকে সাইপ্রাসে ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৯ লাখ টাকা নিয়ে সৌদি আরব, দুবাই হয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে, যিনি এখন যুদ্ধক্ষেত্রে আটকা পড়েছেন। এদিকে রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭)। দীর্ঘ সাত মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর গত ৮ অক্টোবর তাঁর মৃত্যুর খবর জানা যায়। বর্তমানে যাঁরা বেঁচে আছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন পরিবারেরা।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে টক্কর দিতে ফ্রান্স থেকে ১০০ রাফাল কিনছে ইউক্রেন

ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাংসদের বাড়ি পুড়িয়ে দিল জামায়াতে-এনসিপি সন্ত্রাসীরা

সৌদি আরবে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় হায়দরাবাদের একই পরিবারের ১৮ সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু

ইউনূসের আবদার মানছে দিল্লি, ফেরত পাঠানো হচ্ছে না হাসিনাকে

হাসিনার ফাঁসির সাজাকে কোরাস সুরে স্বাগত বিএনপি-জামায়াতে ও এনসিপি’র

ভেনিজুয়েলার কাছে ঘুরপাক খাচ্ছে সবচেয়ে উন্নত বিমানবাহী মার্কিন রণতরী, কি পরিকল্পনা ট্রাম্পের?

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ