নিজস্ব প্রতিনিধি: রবি দুপুরেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সোম সকালে সেটাই বাস্তবে করে দেখালেন। ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(Enforcement Directorate) বিরুদ্ধে এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টে(Supreme Court) মামলা দায়ের করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়(Rujira Banerjee)। সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই মামলায় ইডি’র নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি দিল্লি হাইকোর্টের(Delhi High Court) ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা গ্রহণ করলেও তা জরুরি ভিত্তিতে শুনানি করতে রাজি হয়নি। যদিও এই মামলা দায়ের হওয়ার পরে অভিষেক এদিন আদৌ আর দিল্লিতে ইডি’র কার্যালয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। তবে এদিন বেলা ১১টা নাগাদ অভিষেক দিল্লিতে ইডি’র কার্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন।
কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডে অভিষেক ও রুজিরাকে জেরা করার কাজ অনেক আগেই শুরু করেছিল ইডি। কলকাতায় কালিঘাটে অভিষেকের বাড়িতে গিয়ে যেমন তাঁরা রুজিরাকে একদফা জেরা করেছে তেমনি অভিষেককে দিল্লির কার্যালয়ে টানা ১০ ঘন্টা পর্যন্ত জেরা করেছে। তারপরেও আবার তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল ইডির কার্যালয়ে। কিন্তু সেই ডাক শুনেই আর ইডি’র কার্যালয়ে হাজিরা দেননি অভিষেক ও রুজিরা। পরিবর্তে তাঁরা বলেছিলেন তাঁরা জেরার মুখোমুখি হতে রাজি। কিন্তু সেই জেরা করা হোক কলকাতায় ইডি’র কার্যালয়ে। বার বার তলব মাত্র দিল্লিতে হাজিরা দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। ইডি সেই অনুরোধ না রাখায় অভিষেক দিল্লি হাইকোর্টের দ্বরাস্থ হন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সেই মামলা দায়ের হয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে। অথচ একদিনের জন্যও তা শুনানির জন্য ওঠেনি। কিন্তু দেশের ৫ রাজ্যের বিধানসভার ভোটে বিজেপি ভাল ফল করার পরে পরেই দিল্লি হাইকোর্টে অভিষেক ও রুজিরার ইডি সংক্রান্ত মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়। এর পরেই ইডি থেকে ইমেল মারফত অভিষেক ও রুজিরাকে চলতি সপ্তাহে দিল্লিতে এসে ইডি’র কার্যালয়ে হাজিরা দিতে বলা হয়।
ইডি’র জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি যে তাঁরা এড়িয়ে যাবেন না সেটা রবিবার কলকাতা থেকে দিল্লির পথে রওয়ানা দেওয়ার আগেই কলকাতা বিমানবন্দরে জানিয়ে দিয়েছিলেন অভিষেক। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিলেন ইডি’র নিরপেক্ষতা নিয়ে ও দিল্লি হাইকোর্টের ভূমিকা নিয়েও। একই সঙ্গে আক্রমণ শানিয়েছিলেন বিজেপির দিকেও যে তাঁদের অঙ্গুলিহেলনেই এসব হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সিবিআই ইডির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে। আমি লড়াই করব। মাথা উঁচু করে লড়ে যাব। সুপ্রিম কোর্টের দরজা খোলা আছে। দরকার হলে আমি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব। বিধানসভা ভোটে আত্মসমর্পণ করিনি। মাথা উঁচু করে লড়াই করেছি। মানুষের ভোটে জিতেছিলাম। লড়াই করে জয় পেয়েছিলাম। মাথা নিচু করতে হলে মানুষের কাছে করব। এর আগেও ইডি ডেকেছিল। ১০ ঘণ্টা জেরা করেছিল। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। বারবার কলকাতা বদলে দিল্লিতে ডেকে হয়রান করা হচ্ছে। কলকাতায় ডাকলে দরকারে রোজ যেতাম। কিন্তু এভাবে রাজ্যের একাধিক কাজ ফেলে দিল্লি যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এই সুযোগটাই নিচ্ছে বিজেপি। দিনচারেক আগে চোখে অপারেশন হয়েছে। সেই নিয়েই যাচ্ছি। মাথা উচু করে বাঁচতে জানি। কোনও কিছুর বিরুদ্ধেই মাথা নোয়াব না। আর সেই জন্যই এই লড়াই। আমি দেড় বছর আগে যা বলেছিলাম, আজও তাই বলছি। আমার বিরুদ্ধে কোনও রকম টাকা নেওয়ার যদি প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করব।’
এছাড়াও তিনি জানিয়েছিলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ, কাগজ মুড়িয়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের সিবিআই ইডি ডাকে না। তখন ওঁদের চোখে ছানি পড়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এদের গাত্রদাহ কেন, কারণ এরা বাংলায় হেরেছে। গত বছর এদের আমরা ল্যাজেগোবরে করেছি। বাংলার মানুষ বহিরাগতদের তাড়িয়েছে। বাংলার মানুষ মেরুদণ্ড বিক্রি করেনি বলে গায়ে জ্বালা। কিন্তু আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব। দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করেছিলাম। দীর্ঘ দিন শুনানির পর তিন মাস রায় স্থগিত রাখা হয়েছিল। গত ১০ তারিখ চার রাজ্যে নির্বাচনে বিজেপি জেতার পর ১১ তারিখ আমার পিটিশন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও বলছি আমি বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখি। কিন্তু দু’টি বিযয় কাকতালীয় হতে পারে না। আমি জুরিসডিকশন চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। কলকাতার মামলায় দিল্লি কেন ডেকে পাঠাবে। কলকাতায় তো অফিস আছে। যতবার খুশি ডাকুন। আমি তো বলিনি যাব না। বাংলার লোক মাথানত করে না। আমি মানুষের কাছে মাথা নত করতে পারি। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না।’