নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশে(Bangkladesh) বেসরকারি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাঙ্কের(NRB Global Bank) ১০ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় এপার বাংলার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর থেকে ইডি’র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ওই ঘটনার মূল মাথা পি কে হালদার(P K Halder) বা প্রশান্ত কুমার হালদার। রবিবার সকালে তাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৩ দিনের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডি’(ED)র হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী তথা তার প্রতিবেশী সুকুমার মৃধা, সুকুমারের মেয়ে, পি কে হালদারের দুই ভাই প্রণবকুমার হালদার ও প্রীতিশকুমার হালদার এবং উত্তম মিত্রকে। সুকুমারের মেয়েকে বিচারক জেলে হেফাজতে পাঠালেও বাকি ৫জনকে পি কে হালদারের সঙ্গেই ইডি’র হেফাজতে পাঠিয়েছেন। সুকুমারের জামাই সঞ্জীব হালদারকেও প্রথমে আটক করলেও পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রেফতারির ঘটনা সামনে আসতেই এখন বাংলাদেশের সরকার চাইছে দ্রুত পি কে হালদার ও বাকি অভিযুক্তদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে সেখানেই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের বুকে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনাটি সামনে আসে। তার জেরে বাংলাদেশ সরকার পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের নিয়ে অভিযোগ জানায় ভারত(India) সরকারের কাছে। মোদি সরকার সেই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব তুলে দেয় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডি’র হাতে। ঘটনার তদন্তে নেমে ইডি জানতে পারে পি কে হালদার কার্যত নিজের নাম পরিচয় বদলে এ পার বাংলার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে শিবশঙ্কর হালদার নাম নিয়ে বসবাস করছেন। সেখানেই আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন এই জালিয়েতির ঘটনায় জড়িত বাকি অভিযুক্তরা। লকডাউন ও কোভিডের কারণে ইডি এই ৩ বছরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তবে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল ইডি। এরপর বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনী ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও ইডি গত শুক্রবার অশোকনগরে হানা দেয়। শুধু অশোকনগরই নয়, এ পার বাংলার ৪টি জেলার মোট ৯টি জায়গায় হানা দেয় ওই দুই বাহিনী।
সেই অভিযানের হাত ধরেই তল্লাশি, একের পর এক সম্পত্তি উদ্ধার, পি কে হালদারের গ্রেফতারি, তার সহযোগীদের আটক করে জেরা এবং পরিশেষে গ্রেফতারির ঘটনা ঘটেছে। সামনে এসেছ এদের বিপুল সম্পত্তির পরিমাণ যা এ রাজ্যের একাধিক জায়গায় যেমন ছড়িয়ে রয়েছে তেমনি দেশের অনান্য শহরেও এদের সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। মনে করা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে কার্যত লুঠ করা ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়েই এই বিপুল সম্পত্তি তৈরি করেছে অভিযুক্তরা। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক ইতিমধ্যেই ঢাকায় ঘোষণা করেছে যে পি কে হালদার বা প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার সহযোগীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, জালিয়াতি-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে বিচার করা হবে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকায় খুব শীঘ্রই প্রশান্তদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে। চক্রের মূল মাথা অবশ্যই পি কে হালদার বা প্রশান্তকুমার হালদার। বিভিন্ন নামে বাংলাদেশে ২৬টি কোম্পানি খোলেন তিনি। গাড়ি, জমি-বাড়ি-সহ বিভিন্ন ব্যবসা দেখিয়ে ধাপে ধাপে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়। তা কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা পড়তেই শুরু হয় আসল খেলা। বিভিন্ন লেনদেন দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় ওই অর্থ। তারপর ঘুরপথে টাকা তুলে হাওলার মাধ্যমে এদেশে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ। ২০১৯ সালে বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ সরকারের।