নিজস্ব প্রতিনিধি: হাজারও আবেদন নিবেদনেও কিছু হল না। সিবিআইয়ের কার্যালয়ে হাজিরা দিতেই হল। এসএসসি(SSC) গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ ঘিরে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং তা নিয়ে যে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) তাতেই উঠে এসেছিল এসএসসির ৫জন উপদেষ্টার সন্দেহজনক ভূমিকা। ওই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রধান সদস্য শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে হাজিরা দিতে হবে কলকাতায় নিজাম প্যালেসে সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ওই সংগঠন জেরা করবে শান্তিপ্রসাদকে। সেই নির্দেশ মেনেই হাজিরা দেন শান্তিপ্রসাদ। কিন্তু পরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় উপদেষ্টামণ্ডলীর বাকি ৪ সদস্যকেও সিবিআইয়ের কার্যালয়ে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন যা ওই ৪জন মানেননি। বরঞ্চ তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টেরই ভিডিশন বেঞ্চে আবেদন জানায় সিবিআই(CBI) জেরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে। কিন্তু এদিন সেই আবেদন খারিজ হতেই পুলিশ(Police) তাঁদের পৌঁছে দেয় নিজাম প্যালেসে(Nijam Palace)।
উল্লেখ্য, এসএসসি’র উপদেষ্টামণ্ডলীর যে ৪ সদস্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন সেই আবেদনের এদিন শুনানি হওয়ার কথা ছিল বিচারপতি বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্র সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু এদিন সকালেই বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন জানিয়ে দেন তিনি আর এই মামলা শুনছেন না। শুধু তাই নয়, এ ছাড়াও গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা-সহ মোট ১০টি মামলা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্র সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ। তার জেরে ওই চার কর্তা অর্থাৎ সুকান্ত আচার্য, প্রবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, অলোককুমার সরকার এবং তাপস পাঁজা ফের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চেই আবেদন জানান, তাঁদের সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিতে। তাঁদের যুক্তি ছিল, শান্তিপ্রসাদ যদি সিবিআইয়ের জেরা থেকে সাময়িক অব্যাহতে পেতে পারেন তাহলে তাঁরা কেন সেই সুযোগ পাবেন না! আদালত যেন তাঁদেরও সিবিআইয়ের জেরা থেকে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু এই আর্জি এদিন শোনামাত্রই খারিজ করে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
শুধু খারিজ করাই নয়, তিনি এদিন স্পষ্ট নির্দেশ দেন এদিনই ৪ কর্তাকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে হাজিরা দিতে হবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাঁর নির্দেশে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, সুকান্ত আচার্য এবং প্রবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুপুর ২টোর মধ্যে ও অলোককুমার সরকার এবং তাপস পাঁজা এদিন দুপুর ৩টের মধ্যে সিবিআই কার্যালয়ে হাজিরা দেবেন। তাঁদের সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে পৌঁছে দেবে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকেরা। কার্যত এই দায় বর্তেছিল কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনারের কাঁধে। অন্যদিকে এই চার কর্তার আবেদন শোনার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব দুপুর ১টার সময় স্থির করে দিয়েছিলেন বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য। কিন্তু দুপুর ২টোর সময় দেখা যায়, বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ব্যস্ত থাকার কারণে মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। ওই অবস্থায় ফের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন চার এসএসসি কর্তার আইনজীবীরা। তাঁরা আবেদন করেন, তাঁরা নিরুপায়। এই মামলা আজকেই যাতে শোনা হয়, তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি জানান। এরপর মামলাটি প্রধান বিচারপতি পাঠিয়ে দেন বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু বিচারপতি সৌমেন সেন জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিও এই মামলা শুনতে পারবেন না। কারণ, তাঁর নিজস্ব কিছু মামলা রয়েছে, সেগুলি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণেই ওই মামলা তিনি শুনতে পারছেন না। এরপর প্রধান বিচারপতি নিজেও জানিয়ে দেন চার এসএসসি কর্তার আবেদন খারিজ করা হচ্ছে। এরপরেই সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরেই ওই ৪ কর্তাকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে পৌঁছে দেয় পুলিশ।