নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাকে তাঁরা শাসন করেছেন ৩৪ বছর ধরে। অথচ ক্ষমতা হারাবার এক দশকের মধ্যেই তাঁরা বিলুপ্ত হয়ে গেলেন বাংলার বিধানসভা থেকে। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম বাংলার বিধানসভা কমরেড মুক্ত। সেই বামেরাই এবার পুরনির্বাচনের প্রেক্ষাপটকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর ময়দান হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তাদের দাবি, কলকাতা পুরনিগমের পাশাপাশি রাজ্যের যে শতাধিক পুরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে সেই নির্বাচনেই বামেরা ক্ষমতার দখল নিতে পারুক বা না পারুক, ভোট ও আসন প্রাপ্তির বিচারে তাঁরা বিজেপিকে পিছনে ফেলে ফের রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের জায়গায় চলে আসবেন।
২০১১ সালে পরিবর্তনের পর থেকে সময় যতই গড়িয়েছে, বামেদের ভোট ততই কমেছে পাল্লা দিয়ে। একইসঙ্গে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই এটা বোঝা গিয়েছিল বাংলার বুকে বামেদের ভোট রামের ঘরে ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে। কার্যত সেই ভোটে ভর দিয়েই বিজেপি বাংলায় নিজেদের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হয়। তারই বড় নজীর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এ রাজ্য থেকে ১৮টি আসন জিতে উঠে আসার ঘটনা। সেই ভোটেও বামেরা ১টিও আসন জিততে পারেনি। কার্যত সেই ভোটের ফলাফলই বলে দিয়েছিল, বাংলায় বিরোধী পরিসর বামেদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে রামবাহিনী। ২০২১ সালের নির্বাচনে সেই বামভোটকে গ্রাস করার প্রক্রিয়া পূর্ণ করেছে গেরুয়া শিবির। বাংলার বিধানসভা বাম শূণ্য। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসও। পরিবর্তে বাংলার বিরোধী দল এখন বিজেপি। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রাজ্যের অনেক বাসিন্দারাই কিন্তু মনে করছেন বিধানসভার পরে এবার পালা পুরসভার। সেখান থেকেও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে বামেরা। পরিবর্তে বিধানসভার মতোই পুরসভাগুলিতেও বিরোধী দল হিসাবে উঠে আসবে বিজেপি।
তবে বামেদের ভাবনাচিন্তা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। তাঁদের দাবি, রাজ্যের মানুষ বিজেপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাই তাঁরা আর বিজেপিকে ভোট দিয়ে নতুন করে আর বড় কোনও ভুল করবে না। বামেরা বিরোধী দলের ভূমিকায় না থাকলে রাজ্যবাসীর কী অসুবিধা হতে পারে তা এই ৬ মাসে তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গিয়েছেন। বিজেপি বিরোধী দল হয়েও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও আন্দোলন করছে না। আন্দোলনের নামে নাটক করছে আর বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করছে। তাই রাজ্যবাসী পুরসভা নির্বাচনে বামেদেরই আবার তাঁদের পুরাতন স্থানে ফিরিয়ে আনবেন বলে আশাবাদী বামেরা। তাঁদের সেই আশার স্বপক্ষে তাঁরা তুলে ধরছেন সাম্প্রতিক কালের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল। সেখানে কিন্তু দেখা গিয়েছে ২-৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপিকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছে বামেরা। আর এই ঘটনাকেই সামনে তুলে ধরে বামেরা আশা রাখছেন রাজ্যবাসীও পুরনির্বাচনে বিজেপি অপেক্ষা তাঁদেরকেই ভোট দিয়ে বিরোধী পরিসরে আরও বৃহত্তর ভাবে ফিরিয়ে আনবে।