নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের রাজ্যগুলির বিধানসভার হাত থেকে আইন প্রণয়ণের যাবতীয় ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। সেই সঙ্গে কেড়ে নিতে চাইছে বিধানসভাগুলির সার্বভৌমত্ব ক্ষমতাতেও। আর সেই লক্ষ্যেই দেশজুড়ে One Nation One Election কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে মোদি সরকার। ২৪’র ভোটে জিতে ফের তৃতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি(BJP) কেন্দ্রে সরকার বানালে তখন তাঁরা উঠেপড়ে লেগে যাবেন One Nation One Election কার্যকর করতে। রাজ্যভিত্তিক বিধানসভাগুলির ওপর কার্যত নিয়ন্ত্রণ কায়েম করবে তাঁরা। আর সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল দেশের সব রাজ্যের বিধানসভাগুলির অধ্যক্ষদের নিয়ে হয়ে যাওয়া All India Speaker Conference-এ One Nation One Election কার্যকর করার স্বপক্ষে একটি প্রস্তাব পাশ হওয়ায়। যদিও বাংলার বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু প্রস্তাব পাশ হওয়া ঠেকাতে পারেননি।
নরেন্দ্র মোদির সরকার চাইছে, গোটা দেশে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গে করাতে। তারজন্যই ‘এক দেশ এক ভোট’ বা One Nation One Election নীতি প্রণয়নের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির। সেই কারণেই দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে কমিটি। কীভাবে সারা দেশে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা-মতামত নেওয়ার পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। যে সূত্রেই সামনে এসেছে গত ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি মুম্বইতে অনুষ্ঠিত হওয়া All India Speaker Conference’র পাশ হওয়া Resolution-টি। ওই সম্মেলনে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় সহ দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের বিধানসভার অধ্যক্ষদের ডাকা হয়েছিল। ২-৩টি রাজ্য বাদে দেশের বাকি বিধানসভাগুলির অধ্যক্ষরাও হাজির ছিলেন সেই সম্মেলনে। সেখানেই প্রস্তাব নেওয়া হয় One Nation One Legislative Platform নাম দিয়ে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এক দেশ এক পরিষদীয় প্ল্যাটফর্ম কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটা করা হচ্ছে আইনসভা ও নাগরিকদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উদ্দেশে।
যদিও সেখানে উপস্থিত বাংলার বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়(Biman Banerjee) সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি সম্মেলনের মধ্যে হাত তুলে কড়া ভাষায় তাঁর প্রতিবাদের সুরে জানান, ‘এই প্রস্তাবকে সমর্থন করি না। এই প্রস্তাব সংবিধান বিরোধী। প্রতিবাদ করছি। এই প্রস্তাব এক দেশ এক ভোট-এর নামান্তর। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর ব্যাপক আঘাত হানবে।’ যদিও তাঁর সুরে সেভাবে কেউ সুর মেলাননি। প্রস্তাব পাশ হতেও সমস্যা হয়নি। উল্লেখ্য, এই নীতি কার্যকর করার বিরুদ্ধে আগেই সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি গত ১১ জানুয়ারি চিঠি লিখেছিলেন এক দেশ এক ভোট নীতির জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সচিব ডঃ নীতেন চন্দ্রকে। চার পাতার সেই চিঠিতে মমতা ৬টি ধাপে তাঁর আপত্তির কথা জানান। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, ‘এক দেশ এক ভোট, মানছি না। এটা গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থী। কার্যত গণতন্ত্রকে খুনের ষড়যন্ত্র কেন্দ্রের।’ ফলে আগামীদিন ‘একক পরিষদীয়’ ব্যবস্থার দিকে কেন্দ্র অগ্রসর হলে, বাংলার প্রতিবাদ যে অব্যাহত থাকবে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।