নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০ অক্টোবর থেকে দুর্গাপুজো। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। তবে দুর্গাপুজোর রেশ গ্রামে-মফস্বলে ৪ দিন হলেও কলকাতায় পুজোর আমেজ শুরু হয়ে যায় ১৫ দিন আগে থেকেই। যেমন ১১ অক্টোবর থেকে কলকাতায় পুরোদস্তুর পুজো শুরু। কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে কোনও ফেস্টিভ্যালের তুলনা চলে না, বিদেশ বিভুরেও কলকাতার পুজো অন্যতম আকর্ষণীয়। ইতি মধ্যেই কলকাতার এলাহি মণ্ডপ বাধা প্রায় কমপ্লিট। সঙ্গে রংয়ের রাজ্যের আনাচে-কানাচে ও পুজোর প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে। তবে একটা কথা, যেটা না বললে একেবারেই হবে না তা হল, কলকাতার পুজোর সঙ্গে ‘লাল রঙের পাড়া’র যোগসাধন। অর্থাৎ মা দুর্গার সঙ্গে যৌনপল্লির সোনাগাছির বন্ধন অনেকদিন। মায়ের পুজো তাঁদের পাড়ার মাটি নাহলে অসম্পূর্ণ। সমাজের কাছে যারা কলুষিত, দেখুন তাঁদের ছাড়াই পুজো অসম্পূর্ণ। কলকাতার অন্যান্য এলাকার মতো সোনা গাছির পুজোও অনেকে ফেমাস।
তবে অনেক লড়াইয়ের পর তাঁরা পুজোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তাঁদের পুজোর বয়স তখন ১১ বছর। শেষ কয়েক বছর তাঁরা থিমও ঢুকিয়েছে তাঁদের মণ্ডপে। প্রতি বছরই কোনও না কোনও সামাজিক বার্তা দিয়ে থাকেন পুজোর আয়োজক যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। কিন্তু এবার তাঁরা অন্য কিছু ভাবছেন। নিজেরাই থিমের মুখ হবেন। হ্যাঁ, এবার কলকাতার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, শেঠবাগান, রামবাগান গলির মেয়েরা নিজেদের পুজোর থিম যোগ দেবেন। ঘোষিত হল যৌনকর্মীদের পুজোর থিমের, যার নাম ‘আমাদের পুজো, আমরাই মুখ।’ যেখানে নিজেদের কথাই তুলে ধরবেন যৌন কর্মীরা। অভিনেতা, অভিনেত্রী থেকে মডলদের উড়িয়ে সোনাগাছির মেয়েরা নিজেরাই মডেল হিসাবে ফোটোশুটে অংশ নিচ্ছেন। কারণ সোনাগাছির পুজোর হোর্ডিং লাগবে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়।
এই প্রসঙ্গে দুর্বারের সম্পাদক বিশাখা লস্কর একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘যত যাই হোক, আমরা উৎসবের দিনেও আলাদাই থাকি। এ বার আমরা ঠিক করেছি, আমরাও অন্যদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব না। আমরাই হয়ে উঠব পুজোর মুখ। একটি সংস্থার সাহায্যে শুটিংপর্ব মিটে গিয়েছে। হোর্ডিং, ব্যানার তৈরি হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হবে।’’
২০১৩ সালে প্রথম বার পুজো হয়েছিল যৌন পাড়ায়। কিন্তু পুজোর অনুমতির জন্যে অনেক লড়াই করতে হয়েছিল তাঁদের। শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের নির্দেশে পুজোর আয়োজন শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু নির্দেশের আওতায় থাকে তাঁদের ঘরের ভিতরেই পুজোর অনুমতি। এরপর ২০১৫ তে আবারও অশান্তি হয়, শেষমেষ ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে সোনাগাছিতে দুর্বারের অফিসবাড়ির কাছে মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের উপরে আট বাই কুড়ি ফুটের মণ্ডপে দুর্গাপুজো করার অনুমতি পান তাঁরা। প্রতি বছর একচালার দুর্গা আসে এখানে। এখন দুর্বারের উদ্যোগে বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর, আসানসোল, বসিরহাটের যৌনপল্লিতেও দুর্গাপুজো হয়। তবে কলকাতার অন্য পল্লিতে পুজো না হওয়ার কারণে রামবাগান, শেঠবাগান, রবীন্দ্রসরণি, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, পলাতক ক্লাব এলাকার যৌন কর্মীরা সোনাগাছিতেই অংশ নেন। পুজোর ভোগ পৌঁছে যায় কলকাতার নানা প্রান্তে। শাস্ত্র মতে দুর্গাপুজোর জন্য বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা আর দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছিল একসময়, সেই রাগ উগরে দিয়েই পুজোর থিমে এ বার যে রাগের প্রকাশ, করছেন যৌনকর্মীরা।