নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দল গোহারান হারিয়েছে বিজেপিকে। কার্যত দেশের সব থেকে শক্তিশালী দলকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজে ডজন দুই সভা করেও বাংলায় পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তৃণমূলকে হারাতে কেন্দ্রের এজেন্সি থেকে নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী সব মাঠে নেমে পড়েছিল কোমর বেঁধে। কিন্তু বাংলার অগ্নিকন্যাকে হারাতে পারেনি তাঁরা। বাংলা মমতার হয়েই থেকে গিয়েছে। আর গোহারা হেরে কোমর ভেঙেছে বিজেপির। আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচন। সেখানেও তৃণমূল কার্যত ক্লিন স্যুইপে জেতার মুখে। কিন্তু সেই জয়ের পথে অস্বস্তি ছড়িয়েছে দলেরই ৩সদস্যের নির্দল প্রার্থী হয়ে দ্দাঁড়িয়ে পড়ার বিষয়টি। এই ৩জন হলেন শহরের ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী রতন মালাকার এবং ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী তনিমা চট্টোপাধ্যায়। এবার এদের নিয়েই কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে তৃণমূল।
বাংলার মাঠে বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূল এখন জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে ঝাঁপ দিয়েছে। কার্যত মমতাই এখন মোদি বিরোধীতার প্রধান মুখ। বাংলার পাশাপাশি তৃণমূল এখন মেঘালয়, ত্রিপুরা, গোয়ার মতো রাজ্যেও দলের কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে। কার্যত তৃণমূলের লক্ষ্যই এখন ২০২৪ সালে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠা। যার সম্ভব হলে মোদি শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে একটি জোট সরকার তৈরি করা। সন্দেহ নেই সেই সরকারের মুখ হতে চলেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় জোড়াফুল শিবিরের কেউ দলেরই ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করলে দল যে তাঁকে ছেড়ে কথা বলবে না সেটা ভেবে নেওয়াই উচিত। বৃহস্পতিবার কার্যত এই ইঙ্গিতই মিলেছে দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস কুমারের কথায়। তিনি জানিয়েছেন, ‘আগামী শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে নির্দল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাববে।’
কিন্তু ঘটনা এটাই যে, ওই ৩ নির্দল প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজি নন। আর সেই জায়গা থেকেই এই ৩ ওয়ার্ডে ভোট ভাগাভাগি হওয়ারর একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ১৪৪ ওয়ার্ড বিশিষ্ট কলকাতা পুরনিগমের পুরনির্বাচনে জয়ের মুখ দেখতে এই ৩ ওয়ার্ডের ভোট ভাগাভাগি কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় তৃণমূলের কাছে। ওয়াকিবহাল মহলেরও ধারনা তৃণমূল খুব কম করেও ১২০টি আসনে জয়ী হয়ে কলকাতা পুরনিগমের ক্ষমতা দখল করবে। তাই ৩টি ওয়ার্ডে হারজিত সেভাবে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু তৃণমূল শিবিরে পাল্টা যুক্তি, দলেরই ৩ সদস্য দলের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রার্থী হলে দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে বইকি। তাছাড়া এই ৩ সদস্যের মধ্যে সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে তৃণমূলের সদস্য নন বলে দাবি করলেও, দল তাঁকে পুরনিগমের চেয়ারম্যান করেছিল। আবার রতন মালাকার দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলনেত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। ফলে দলের অন্দরেই অস্বস্তি ছড়িয়েছে পুরোদমে। আবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায় যেভাবে দাদার আবেগকে পুঁজি করে মাঠে নেমে পড়েছেন তাতে বালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকাজুড়েই ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কেননা এই বিধানসভা কেন্দ্রেরই বিধায়ক ছিলেন সুব্রতবাবু। এখানেই আগামী ৬ মাসের মধ্যে হতে চলেছে উপনির্বাচন। তার আগে এই নির্দল কাঁটা অস্বস্তি ছড়িয়েছে জোড়াফুল শিবিরে। তাই নির্দল কাঁটা না সরলে তৃণমূল থেকেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যে হবে তারই ইঙ্গিত এদিন দিয়ে দিয়েছেন দেবাশিষ কুমার। আর সেটা যে বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ হতে পারে সেটাও পরিষ্কার।