নিজস্ব প্রতিনিধি: আরও একটা জনসুমানি আছড়ে পড়তে চলেছে শহর কলকাতার(Kolkata) বুকে, আগামী ১০ মার্চ তারিখে। কেননা সেদিনই কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে(Brigade Parade Ground) রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) উদ্যোগে আয়োজিত হতে চলেছে ‘জনগর্জন সভা’। সেই সভা আয়োজনের সেনাপতির দায়িত্বে থাকছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে দলের রাজ্য পদাধিকারিদের তরফে দলের জেলা সভাপতি, শাখা সংগঠনের প্রধান, সাংসদ, বিধায়কদের চিঠি দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী(Subrata Bakshi)। তাতেই জানানো হয়েছে, দলের সেনাপতি এখন অভিষেকই। কার্যত এই চিঠি বলে দিচ্ছে, তৃণমূলের অন্দরে দলনেত্রী ও অভিষেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেছে বলে যে সব প্রচার করা হচ্ছে নানা সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তা কার্যত মিথ্যা ও কুৎসার প্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুব্রত বক্সি যে চিঠি দিয়েছেন দলের সাংসদ, বিধায়ক থেকে শুরু করে দলের জেলা সভাপতি, শাখা সংগঠনের প্রধানদের তাতে লিখেছেন, ‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্র এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রতিবাদ কার্যক্রম এবং অবস্থান বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং অন্তহীন বঞ্চনার প্রতিবাদে আগামী ১০ মার্চ সকাল ১১টায় কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদ জনসভার ডাক দিয়েছেন আমাদের দলের সেনাপতি এবং নির্ভীক যোদ্ধা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনাদের কাছে নির্দেশ যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে এবং সমস্ত শাখা সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে ১০ মার্চের ব্রিগেড চলো অভিযানকে ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব করে তুলতে হবে।’
কার্যত এই চিঠি বলে দিচ্ছে, এখন তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই দলের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। সেই সমাবেশ সব দিক দিয়েই সফল করে তুলতে যাবতীয় পরিকল্পনা নিচ্ছেন অভিষেক। তাঁর নির্দেশ মতো দলের সবাইকে যে কাজ করে এই সমাবেশকে সফল করে তুলতে হবে সেটা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন বক্সি। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, কোন সাংগঠনিক জেলাকে ব্রিগেডে কত লোক নিয়ে যেতে হবে, দিন কয়েকের মধ্যে সে নির্দেশও চলে যাবে। জোড়াফুল শিবিরের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ, অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এই প্রথম ব্রিগেড সমাবেশ হচ্ছে। তাই এতে রেকর্ড ভিড় টানতে বাড়তি সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন অভিষেক। সেই কারণেই তিনি ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেই প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে। রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকা থেকে অন্তত ২০ হাজার মানুষকে ব্রিগেডে নিয়ে যাওয়ার ল্কখ্য নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, তৃণমূলের অন্য সাংগঠনিক জেলাগুলিও দিন কয়েকের মধ্যে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে জেলাস্তরে বৈঠক করবে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ-সহ দূরবর্তী জেলা থেকে যাঁরা সমাবেশের দু-একদিন আগে কলকাতায় পৌঁছবেন, তাঁদের রাত কাটানো ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থায় প্রস্তুতি শুরু করছে তৃণমূল। দূরবর্তী জেলার মানুষ বিধাননগর ও কলকাতার কোথায় কোথায় থাকবেন, তা দিন কয়েকের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের সময়ে সাধারণত বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্ক, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম-সহ নানা জায়গায় দূরবর্তী জেলার মানুষরা থাকেন। এ বার আরও কিছু জায়গায় তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত হতে পারে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য। ব্রিগেডমুখী জনতাকে মূলত ট্রেনে নিয়ে আসতে চাইছেন উত্তরবঙ্গের জেলা নেতৃত্ব। আর তাই কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিংয়ের নেতারা দিন কয়েকের মধ্যে হাওড়া ও শিয়ালদহমুখী বিভিন্ন ট্রেনে বুকিং শুরু করবেন বলে খবর।