এই মুহূর্তে




ত্রৈলঙ্গস্বামীর কাণ্ডে চোখে সর্ষেফুল দেখেছিলেন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট, জানুন অজানা কাহিনি




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় : আত্মদর্শন ও আধ্যাত্মিকতার দেশ এই পুণ্যভূমি ভারত। বহু বছর ধরে বহু মুনি, ঋষি, অবতার, মনীষী, মহাপুরুষেরা ভারতের আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে এই দেশকে সমগ্র পৃথিবীর শীর্ষে নিয়ে গেছেন। বুদ্ধ, মহাবীর, চৈতন্য থেকে শুরু করে শ্রী রামকৃষ্ণ, লোকনাথ, ত্রৈলঙ্গ, বিবেকানন্দের মতো মহৎ ব্যক্তিত্বরা জীবপ্রেমের বাণী ছড়িয়ে ভারতের ধর্মীয় সংস্কৃতির পূর্ণত্বের চিরন্তন বিকাশ ঘটাতে তৎপর হয়েছিলেন। তাঁদের কারো কারো জীবনে তাঁদেরই কঠোর সাধনার থেকে প্রাপ্ত শক্তির বিকাশ স্বরূপ এমন কিছু আধ্যাত্মিক ও অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল, যা আজও আপামর ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিস্মিত করে। জীবনে এমনই বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষ্য রেখেছিলেন শিবপুরী কাশীর চলমান বিশ্বনাথ ‘ত্রৈলঙ্গস্বামী’ (১৬০৭ – ১৮৮৭)। তাঁর সুদীর্ঘ ২৮০ বছরের জীবনেতিহাসের পাতা ওল্টালে জানতে পারা যায়, তিনি নাকি একবার কাশীর ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিলেন।

শোনা যায়,  শিবপুরী কাশী শহরে সদ্য আগত এক ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট যেমন রাশভারী, তেমনি শাসনে কঠোর ছিলেন। প্রাচীন কাশীর মাহাত্ম্য নিয়ে অনেক গল্প শুনেছিলেন তিনি, তাই তাঁর মনে এই শহর নিয়ে এক অদ্ভুত কৌতূহল জেগেছিল।একদিন শহর পরিদর্শনে বেরিয়ে তিনি এসে পৌঁছালেন কাশীর ঐতিহ্যপূর্ণ দশাশ্বমেধ ঘাটে। হঠাৎ এক বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে মাথা ঘুরে গেল তাঁর। তিনি দেখলেন —ঘাটের একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন বিশালদেহী, নগ্ন, গম্ভীর এক সাধু। চারপাশের মানুষ তাঁকে ভক্তিভরে নমস্কার করছে।

এই ব্যক্তি আর কেউ নন, কাশীবাসীর পরম শ্রদ্ধেয় ত্রৈলঙ্গস্বামী। সবাই তাঁকে শিবজ্ঞানে মানলেও সাহেব তো এসব মানেন না! ত্রৈলঙ্গস্বামীর নগ্ন অবস্থায় জনসমক্ষে ঘোরাকে চরম অসভ্যতা মনে করে ম্যাজিস্ট্রেট রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন। সাহেব সেনাদের হুকুম দিলেন—“এই লোকটাকে ধরে হাজতে পুরে দাও!”

যেমন বলা, তেমন কাজ। গোরা সেনার দল সঙ্গে সঙ্গে ত্রৈলঙ্গস্বামীকে গ্রেফতার করল। নগরবাসীরা শত অনুনয় বিনয় করলেও ম্যাজিস্ট্রেটের মন বিন্দুমাত্র গলল না।

“আমি কাশীতে কোন অনুশাসনভঙ্গ সহ্য করব না”—এটাই তাঁর কথা।

পরদিন সকালে ম্যাজিস্ট্রেট নিজে হাজতে এলেন বন্দিকে দেখতে। সেখানে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ!

যাকে তিনি তালা-চাবি লাগানো শক্ত লোহার ঘরে বন্দি করেছিলেন, সে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজতের বাইরে বারান্দায়, নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে!

তালা ঠিকঠাক, পাহারা ঠিকঠাক—তবু কীভাবে বেরোলো সে?

প্রহরীদের জেরা করলেন, হাজতের দেয়াল, দরজা, তালা সব পরীক্ষা করলেন তিনি।। কোথাও কোনও ফাঁকফোঁকর নেই। যুক্তি-বুদ্ধি সব যেন এলোমেলো হয়ে গেল সাহেবের। অগত্যা সামনে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, “তুমি এখানে এলে কীভাবে? সত্যি কথা বলো!”

ত্রৈলঙ্গস্বামী হেসে উত্তর দিলেন—“রাতভর ঘরেই ছিলাম। সকালে একটু বাইরে বেরতে ইচ্ছে হল—আর ইচ্ছে করতেই বেরিয়ে এলাম। আমাকে আটকায় কে?”

সাহেব এসব বিশ্বাস করলেন না। ভাবলেন—প্রহরীরা নিশ্চয়ই চুপিচুপি দরজা খুলে দিয়েছে।

এবার আর ভুল করবেন না ভেবে নিজেই তালা দিয়ে এলেন আর একটার জায়গায় দুটো বড় বড় লোহার তালা ঝুলিয়ে দিলেন। চাবি রাখলেন নিজের পকেটে। তৃপ্ত মনে এজলাসে ফিরে এলেন।

কিন্তু সেখানেই ঘটল আরও ভয়ঙ্কর কাণ্ড।

এজলাসের এক কোণে দাঁড়িয়ে সেই একই ত্রৈলঙ্গস্বামী—তবে মুখে একটু দুষ্টু মিষ্টি হাসি। এবার সাহেবের তো মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। তাড়াতাড়ি পকেট হাতড়ালেন—দেখলেন চাবি যথাস্থানে।

তাহলে? এত কঠিন বন্দোবস্ত ভেদ করেও ইনি এলেন কোত্থেকে?

ত্রৈলঙ্গস্বামী এগিয়ে এলেন। শান্ত গলায় বললেন—‘সাহেব, তুমি জড়ের শক্তি বোঝ, চৈতন্যের খবর রাখো না।’ এই বিশ্বে এক মহাচৈতন্য আছে—যার সঙ্গে যোগ হলে জড়ের সব বন্ধন ভেঙে যায়। লোহার তালা, ইটের দেওয়াল, প্রহরী—এ সব কিছুই তখন অর্থহীন। অসীমকে সীমার মধ্যে রাখা যায় না।”

ম্যাজিস্ট্রেট হতভম্ব। বোধহয় সেই প্রথম বুঝলেন—এই পুরাতন নগরীর গভীরে লুকিয়ে আছে এক অলৌকিক সত্য, যাকে সাহেবি আইন দিয়ে বাঁধা যায় না।

ত্রৈলঙ্গস্বামী এক মুচকি হাসি দিয়ে ধীর পায়ে চলে গেলেন। আর ম্যাজিস্ট্রেট বসে রইলেন স্তব্ধ, বিস্ময়ের ভারে নত হয়ে।

তখন তিনি বুঝলেন—কাশী কেবল ইট-পাথরের শহর নয়, এ শহরে বয়ে চলে চিরন্তন চৈতন্যের ধারা।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

একদিনেই ৫ ড্রিমলাইনার বিমান উড়ান বাতিল এয়ার ইন্ডিয়ার, আতঙ্কিত যাত্রীরা

খামেনির দশা হবে সাদ্দাম হুসেনের থেকেও খারাপ, হুঙ্কার ইজরায়েলের

মুক্তিযুদ্ধে একাই খতম করেছিলেন ৬ রাজাকারকে, না ফেরার দেশে বীরাঙ্গনা সখিনা

বাড়িতে পৌঁছল ভেঙে পড়া বিমানের পাইলটের দেহ, কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাবা

ব্যাডমিন্টন কোর্টে মানুষের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই AI রোবটের জিতল কে?

অপমৃত্যুজয়ী শক্তির দাত্রী রূপে পূজিতা হন এই দেবী, চেনেন নাকি?

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ