নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের সরকার যে মেলার জন্য ১ পয়সাও খরচ করে না, দেশের সরকার যে মেলার জন্য ১ পয়সাও রাজ্যকে দেয় না, দেশের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্বের সরকার যে মেলার জন্য ছিঁটেফোঁটাও সাহায্য করে না, সেই মেলাই পেয়ে গেল কিনা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দুমেলার(Second Largest Hindu Fair) খেতাব। সেটাও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) রাজ্যে। মকরসংক্রান্তির(Makar Sankranti) গঙ্গাসাগর মেলায়(Gangasagar Mela 2024) এবার রেকর্ড ভিড়। আর তার জেরেই এই মেলা কোটিরও বেশি মানুষের সমাগম চাক্ষুষ করছে। সরকারি হিসাব বলছে গতকাল মকরসংক্রান্তির দিনেই মেলায় ১ কোটির বেশি মানুষ(More than 1 Crore Devotees) আসার রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। এবছর মেলা শেষ হবে ১৭ তারিখ। অর্থাৎ হাতে আরও দুই দিন সময় আছে। তাই সব মিলিয়ে মেলায় আগত পুণ্যার্থীর সংখ্যা দেড় কোটির আশেপাশে থাকবে বলেই রাজ্য সরকার মনে করছে।
গঙ্গাসাগরের মেলার ইতিহাসে পুণ্যার্থী আগমনের হিসাবে এইবছর কার্যত সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে দিয়েছে। মেলায় এই প্রথম ১ কোটিরও বেশি পুণ্যার্থী আসার রেকর্ড যেমন হয়েছে তেমনি এই মেলা এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা হিসাবেই উঠে এসেছে। যদিও কেন্দ্র সরকার এই মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দিতে নারাজ। কার্যত সেখানেও কেন্দ্রের তরফে বাংলাকে বঞ্চনার রেগর্ড গড়ছে মোদি সরকার। গত কয়েকদিন কনকনে ঠান্ডায় কাবু গোটা সাগরদ্বীপ। মকরসংক্রান্তির দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভোর হতে না হতেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে বেলাভূমি। দৃশ্যমানতা একেবারে কমে যায়। উত্তুরে হাওয়ার দাপট ও হাড় কাঁপানো ঠান্ডাতেও অবশ্য পুণ্যার্জনে আসা তীর্থযাত্রীদের উৎসাহে ভাটা পড়েনি। কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডা জলে ডুব দেন সবাই। গোটা মেলা চত্বর কালো মাথার থিকথিকে ভিড়ে ঢাকা পড়ে। সকালের দিকে কুয়াশার দাপট এতটাই যে, ১০০ মিটার দূর পর্যন্ত কিছুই দেখা যায়নি। কুয়াশার কারণে অনেকে আত্মীয় পরিজনদের হারিয়ে ফেলেন। বিচে কর্তব্যরত সাগররক্ষীরা হ্যান্ডমাইকে নিখোঁজদের নাম ঘোষণা করে ডাকাডাকি শুরু করেন। তবে স্নানে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি।
গতকাল বেলার দিকে মেলায় লোক সমাগম কিছুটা কমে যায়। তবে দুপুরের পর ফের ভিড় আছড়ে পড়ে প্রতিটি বিচে। রাতেও চলে স্নান। ভিড়ের নিরিখে রেকর্ড গড়ার দিনই গঙ্গাসাগরকে কেন জাতীয় মেলা হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে শুরু করে গঙ্গাসাগর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দুমেলা হয়ে উঠেছে। মেলায় আসা সব পুণ্যার্থী একবাক্যে স্বীকার করেছেন মেলায় আসাযাওয়ার পথে এবং মেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যই মেলায় পুণ্যার্থীদের আগমন দেশি হয়েছে। সুবন্দোবস্তের জন্যই মানুষ বেশি করে মেলায় আসতে পেরেছেন। আর সেই ব্যবস্থা করার কৃতিত্ব তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের। কেন্দ্র এই মেলার আয়োজন নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিন্দুমাত্র সাহায্য না করলেও রাজ্য সরকার এই মেলার আয়োজনের জন্য যেমন এই বছর ২৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে তেমনি মেলায় আসান প্রত্যেক পুণ্যার্থীর জন্য ৫ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থাও করেছে। কার্যত মমতার সরকারের হাত ধরেই আজ দেশের দ্বিতীয় হিন্দুমেলা এবং ১ কোটি পুণ্যার্থী আসার জোড়া মাইলফল স্পর্শ করেছে গঙ্গাসাগর।