নিজস্ব প্রতিনিধি: বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা বললেও খুব কম বলা হয়। রাজ্য রাজনীতিতে এদৃশ্য এর আগে কখনও দেখাই যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) পাশে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা থেকে বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) একাধিক নেতা। সবার সুরও এখন এক। কার্যত মমতা যে সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন, সেই একই সুরে, তাঁর দেখানো পথেই হাঁটা দিয়েছেন বিজেপির নেতারা। নজরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের(Viswabharati University) উপাচার্য(Vice Chancellor) বিদ্যুৎ চক্রবর্তী(Bidyut Chakrabarty)। সম্প্রতি UNESCO শান্তিনিকেতনকে(Shantiniketan) World Heritage Site’র তকমা দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যে ফলকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসিয়েছে, সেটিকে কেন্দ্র করে এখন তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেননা ফলকে শান্তিনিকেতনের প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের(Rabindranath Tagore) নামই নেই। আছে বিশ্বভারতীর আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং উপাচার্য হিসাবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম। মমতাই সবার আগে সেই নিয়ে বিরোধিতা শুরু করেন। এখন একে একে সেই সুরে সুর মিলিয়ে চলেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। গতকাল অর্থাৎ রবিবার মুখ খুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari), সোমবার মুখ খুললেন অনুপম হাজরা(Anupam Hazra)।
সোমবার কড়া ভাষায় বিদ্যুতের সমালোচনা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। এদিন অর্থাৎ সোমবার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন অনুপম। তাতে কবিতার আকারে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের সমালোচনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিশ্বভারতীতে পৌষ মেলা বন্ধ করেছেন, দোল খেলা বন্ধ করেছেন, প্রাক্তনী আশ্রমিকদের ‘পদাঘাত’ করেছেন বলে অভিযোগ অনুপমের। তিনি জানিয়েছেন, শান্তিনিকেতনের ভাবধারা আসলে বিদ্যুৎ কখনও বোঝেননি। তাঁর আমলে বিশ্বভারতীতে কবিগুরুর আদর্শ ‘চিৎপাত’ হয়েছে। বিদ্যুৎ কেবল ‘উপাচার্যের আরামকেদারা’কেই প্রাধান্য দিয়েছেন বলে দাবি অনুপমের। সব শেষে উপাচার্যের উদ্দেশে বিজেপি নেতার পরামর্শ, ‘নিঃস্বার্থ ভাবে কখনও রবি ঠাকুরকে ভালবেসো। এ বার তুমি দুগ্গা দুগ্গা করে এসো।’ অর্থাৎ, উপাচার্যকে তিনি শান্তিনিকেতন ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, অনুপম নিজেও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। সেখানে অধ্যাপনাও করেছেন। তবে নিজের পোস্টে কোথাও অনুপম বিদ্যুতের নামটি উল্লেখ করেননি।
প্রসঙ্গত, অমর্ত্য সেনকে নিয়ে বিতর্কের সময় থেকেই উপাচার্য বিদ্যুতের ‘বিজেপি-ঘেঁষা মনোভাব’ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। অনুপম তখনও বিদ্যুতের সমালোচনা করেনছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, উপাচার্য নিজেকে ‘বিজেপি’ বলে প্রমাণ করতে এ সব করছেন। কিন্তু তখন বঙ্গ বিজেপির অনান্য নেতারা বিদ্যুতের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। এখন ঠিক তার উল্টো ছবি। বিদ্যুৎ বিরোধীতায় মম তার দেখানো পথেই হাঁটা দিচ্ছেন একের পর এক বিজেপি নেতা। বিদ্যুতের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসাবে ইউনেস্কো যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তিনি তার কৃতিত্ব নিতে চান।