নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে অষ্টাদশ লোকসভার নির্বাচন(Loksabha Election 2024)। গত ১৯ এপ্রিল হয়ে গিয়েছে প্রথম দফার ভোটগ্রহণও। সেদিন মোট ১০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে বাংলার(Bengal) ৩টি কেন্দ্রও ছিল। এই নির্বাচনের আগেই কেন্দ্র সরকার দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা CAA লাগু করে। সেই আইনের দরুন বাংলার যে ৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়ে গিয়েছে সেখানে মতুয়া ও নমঃশূদ্ররা পদ্মশিবিরকে সমর্থন জানায়নি বলেই এখন দাবি করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। জোড়াফুল শিবিরের দাবি, CAA ও NRC এই দুই আইনই এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির(BJP) কাছে বুমেরাং হয়ে গিয়েছে। এই ২ আইনের দরুন রাজ্যে বিজেপির মতুয়া ও নমঃশূদ্র ভোটেব্যাঙ্কে ধস নামতে শুরু করেছে। তৃণমূলের(TMC) এই দাবি মেনেও নিচ্ছে নমঃশূদ্র ও মতুয়াদের একাংশ।
গত শুক্রবার উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনে প্রথম দফার ভোট হয়েছে। এই তিন জায়গাতেই ভালো সংখ্যক নমঃশূদ্র ও মতুয়া ভোট রয়েছে। উনিশের ভোটে এই ৩ আসনই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু এবার এই ৩ আসনে মতুয়া ও নমঃশূদ্র ভোট বিজেপিতে পড়েনি। বেশিরভাগ ভোট তৃণমূলে পড়েছে বলে দাবি খোদ মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের একাংশের। নমঃশূদ্র ও মতুয়া সমন্বয় কমিটির প্রাক্তন শীর্ষকর্তা হরেকৃষ্ণ সরকার জানিয়েছেন, ‘ভোটের জন্য বিজেপি CAA এবং NRC জুজু দেখিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের একটি বড় অংশ ভোট দিয়েছে। কেননা মানুষ বুঝতে পেরেছে নাগরিকত্ব দিতে হলে বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে তাঁদের প্রত্যেককেই দেওয়া উচিত। কিন্তু বিজেপি যেভাবে নানান শর্ত উল্লেখ করে এই নাগরিকত্ব আইন এনেছে তার পিছনে ভোটের অঙ্ক এবং বড় বিপদ রয়েছে।’
আবার আন্তর্জাতিক নমঃশূদ্র সংগঠনের অন্যতম নেতা ভজহরি গোঁসাইয়ের দাবি, ‘প্রথম দফার ভোটে উত্তরবঙ্গে মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের বেশিরভাগ ভোট বিজেপি থেকে সরে তৃণমূলে পড়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ও নমঃশূদ্ররা বিজেপিকে ঢালাও ভোট দিয়েছিল। কিন্তু যেভাবে নানান শর্ত দিয়ে নাগরিকত্ব আইন বিজেপি সরকার এনেছে তাতে তারা বিপদের আশঙ্কা করছে। রাজনৈতিক স্বার্থে বেছে বেছে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই আইন এনেছে বিজেপি সরকার। যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৯০ শতাংশ মতুয়া ও নমঃশূদ্র ভোট পেয়েছিল, সেখানে এবার সেই ভোট বিজেপি থেকে তৃণমূলে সরে আসছে।’
একই রকম ভাবে পশ্চিমবঙ্গ নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগ্য জানিয়েছেন, ‘মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের একটি বড় অংশ CAA এবং NRC-র জন্যই এবার বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করছে। নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে নানান জটিল শর্ত আমরা কেউই মেনে নিতে পারছি না। মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের একটি বড় অংশের ভোট যে বিজেপি থেকে সরে আসছে তার প্রমাণ প্রথম দফার ভোটে মিলেছে। উত্তরবঙ্গের ৩টি আসনে নমঃশূদ্র ও মতুয়া প্রভাবিত এলাকায় বিজেপি কোনও নির্বাচনী এজেন্ট দিতে পারেনি। CAA এবং NRC-র জন্য বিজেপি থেকে মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের ভোট যে তৃণমূলে সরে আসছে এটাই তার বড় ইঙ্গিত।’ যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এটা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, নমঃশূদ্র বা মতুয়াদের বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও দিক নেই। তৃণমূল CAA এবং NRC নিয়ে যে অপপ্রচার করছে তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এধরনের কাল্পনিক দাবি করছে। মতুয়া ও নমঃশূদ্ররা বিজেপির সঙ্গেই আছেন।