নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি এক দশকের প্রাক্তন বিধায়ক। জেলায় দলের সভাপতি ছিলেন সেও প্রায় এক দশক। অথচ তার আমলেই দল ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কার মুখে পড়েছিল। তার জেরে তিনি খুইয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতির পদ। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দল তাঁকে আর প্রার্থী করেনি। তার জেরে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। সেখানে যোগ দিয়েই বলেছিলেন, ‘এই কাটমানি, গরু পাচারের সরকার আর থাকবে না, মোদির নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ব আমরা, আমি মাঠে নামব, ইটাহারে যারা সংখ্যালঘু ভোটের ঠিকা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা সাবধান ৷’ সেই ভোটে বিজেপি হারতে তিনিও চলে যান পর্দার আড়ালে। পরে আবার পুরাতন দলে ফিরতে চেয়ে আবেদনও জানান। সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’ তাঁর সেই পুরাতন দলে ফেরার সিদ্ধান্ত এখনও আছে ঝুলে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত যাতে তাঁর অনুকূলে না হয় তার জন্য সে পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলেন ওই জেলারই দলের ৮জন বিধায়ক। তিনি অমল আচার্য, উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি।
অমল আচার্য তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে আগেই আবেদন করেছেন। যদিও সেই আবেদন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু অমলের তৃণমূলে ফেরা ঠেকাতে এখন একজোট হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন দলেরই ৮জন বিধায়ক যারা সকলে উত্তর দিনাজপুর জেলা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস উত্তর দিনাজপুর ডিস্ট্রিক্ট কমিটির লেটার হেডে পাঠানো ওই চিঠিতে সই রয়েছে দলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালেরও। চিঠিতে বলা হয়েছে, অমল আচার্যকে আর কোনওভাবেই দলে ফেরানো যাবে না। তিনি দলে থাকাকালীন জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেড়েছিল। এখন আবার তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হলে আগামী লোকসভা ভোটে বালুরঘাট ও রায়গঞ্জ কেন্দ্রে নতুন করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হবে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় অবিশ্বাস্য ফল করেছে তৃণমূল। এই অবস্থায় ওমল আচার্যকে দলে নিলে সংগঠন দুর্বল হবে। এখন সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করছেন। অমল আচার্য দলে ফিরলে দলের একতা ক্ষুন্ন হতে পারে, দল দুর্বল হতে পারে।
তৃণমূলের তরফে এই চিঠি নিয়ে এখনও শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কিছু জানানো হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন কানাইয়ালাল আগরওয়াল। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো দলকে জানিয়েছি। দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী সকলকেই এ বিষয়ে লিখেছি। এখনও কোনও উত্তর আসেনি।’ আবার অমলবাবু জানিয়েছেন, ‘দলের জন্মলগ্ন থেকেই দিদির আদর্শে তৃণমূল করেছি। জানি না কোন অজ্ঞাত কারণে টিকিট পেলাম না। ৫-৭ দিনের জন্য বিজেপি করেছি একটা ক্ষোভে। দুঃখে বেদনায় করেছি। মন থেকে করিনি। তিনি গোটা বাংলাকে কোভিড থেকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করছেন। আর অন্যদিকে তাঁর মন্ত্রিসভার হেভিওয়েট মন্ত্রীরা প্রতিহিংসা চালাচ্ছে। আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বলেছি যে ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে আমাকে দলে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হোক। এখন যে চিঠি দিয়েছে, দল কী করবে দলের সর্বোচ্চ নেত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমাদের সর্বোচ্চ নেত্রী যা নির্দেশ দেবেন সেই নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’