নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্গাপুজোয় যেমন কলকাতা, কালীপুজোয় বারাসত আর জগদ্ধাত্রী পুজোয় বিখ্যাত চন্দননগর। তেমনই পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মানেই কার্তিক পুজো। পারিবারিক ও সর্বজনীন পুজো মিলে কাটোয়ায় প্রায় ২০০-র বেশি কার্তিক পুজো হয়। এখানে রাজাকার্তিক, যোদ্ধাকার্তিক, রামকার্তিক, জামাইকার্তিক নানাভাবে কার্তিক পুজো হয়। ফলে বছরের এই দিনটি সেজে ওঠে প্রাচীন নগরী কাটোয়া। জানা যায়, একসময় বারবনিতাদের হাত ধরেই এই শহরে কার্তিক পুজোর চল শুরু হয়। স্থানীয় একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘বারবনিতাদের কার্তিক আর বাবুদের কার্তিক৷ এই নিয়েই কাটোয়ায় কার্তিকের লড়াই’। জনশ্রুতি, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে কাটোয়া ছিল সমৃদ্ধ বন্দর ও বাণিজ্যনগরী। গঙ্গানদী ধরে বড় নৌকা ও জাহাজে চেপে চলত বাণিজ্য ও পণ্য আদান-প্রদান। ফলে কাটোয়ায় অনেকেই রাত্রিবাস করতেন। তাঁদের যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্যই এখানে পতিতাপল্লীর সূচনা। তাঁরাই প্রথম কার্তিক পুজো শুরু করেন, আর এই পুজোর খরচ মেটাতেন বাবুরাই। প্রায় একশো বছর আগেও কাটোয়া শহরে আলোর রোশনাই, বাজনার আয়োজনে জমজমাট থাকতো। তখন থেকেই কাটোয়ায় কার্তিকের লড়াই শুরু হয়।
কাটোয়ার কার্তিক পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট হল থাকা পুজো। ছোট ছোট পুতুল থাক থাক করে সাজানো থাকে এই থাকা পুজোয়। ওই পুতুলগুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন দিক। কাটোয়া তাঁতিপাড়ায় সাতভাই পুজো অন্যতম প্রাচীন থাকা পুজো। এ পুজোয় সবার উপরে থাকে বড়ো ভাইয়ের মূর্তি, তার দুদিকে তিনজন করে ভাই দাঁড়িয়ে থাকে। সব মিলিয়ে সাতভাই। এছাড়া আছে রাজাকার্তিক পুজো। পায়ের উপর পা তুলে দিব্যি আয়েস করে বসে থাকেন রাজা কার্তিক। মাথায় বাবরি চুল, জমিদারি গোঁফ এবং দশাসই চেহারায় এই কার্তিকের হাতে অবশ্য তীরধণুক নেই। বদলে থাকে গোলাপফুল। স্থানীয়দের বিশ্বাস, একমুঠো নুন আর গঙ্গাজল দিয়ে তাঁর কাছে মনের ইচ্ছে জানালে তা পূরণ হয়। এবছর থাকা ও থিমের পুজো মিলিয়ে ৬৮টি কার্তিক পুজো অনুমতি পেয়েছে। করোনা আবহের জন্য পুজো, আলো, প্যান্ডেল, বাজনা থাকলেও গত বছরের মতো এবছরও শোভাযাত্রা বন্ধই থাকছে।