-273ºc,
Friday, 2nd June, 2023 8:35 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: স্বামীর বাঁধা ধরা কোনও কাজ নেই। তাই দিন কাটে হয় দিন মজুরি করে নাহয় ছোট্ট গুমটিতে পান, বিড়ি ও চা বিক্রি করে। ধারদেনা করে দুই মেয়েকে কোনও রকমে বিয়ের গণ্ডি পার করিয়েছেন। একমাত্র ছেলে সংসারের হাল ধরতে কাটোয়া-কালনা এসটিকেকে রোডে দাঁইহাট মোড়ে একটি ধাবায় কাজ করে। পরিবারের যা আয় তা দিয়ে সংসার চললেও পাকা ঘর করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই বসবাস এখনও মাটির দেওয়াল ঘেরা ঘরে যার ছাদ খড় দিয়ে ঢাকা। তপশিলী পরিবারের সদস্য হওয়ায় জুটেছে তাঁর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ও খাদ্যসাথীর সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু তার বেশি কিছুই পাননি। অথচ তিনি নিজে একটি পঞ্চায়েত সভাপতির সহ-সভাপতি। এহেন জাগুর ভাগ্যে জোটেনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার(PAY) ঘর। এই জাগু হলেন পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdhwan) জেলার কাটোয়া(Katwa) ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জাগু প্রধান(Jagu Pradhan)। বাড়ি তাঁর ওই ব্লকেরই জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের যমুনাপাতাই গ্রামে।
আরও পড়ুন কেন কদর বাড়ছে মমতার, ফাঁস হল সেই হিসাব
বাংলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া নিয়ে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় শাসক দলের নেতা থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা। তাঁরা নাকি কায়দা করে নিজ ঘনিষ্ঠ থেকে পরিবারের সদস্য কিংবা দলেরই সমর্থকদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন ওই তালিকায়। অথচ তাঁরা সেইভাবে ওই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্যই নন বলে অভিযোগ উঠেছে। কার্যত যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের নাম উঠেছে সেই তালিকায়। এই যখন পরিস্থিতি তখন জাগু যেন সিন্ধুতে বিন্দু হয়ে উঠেছেন। নিজে থাকেন মাটির দেওয়াল আর খড়ে ছাওয়া বাড়িতে। তারওপর তপশিলী জাতিভুক্ত। সেই হিসাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাঁর নাম থাকাটাই উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। নাম ওঠেনি তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যের। তবে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই জগুর। বরঞ্চ ভরসা রেখেছেন দলের ওপরেই। জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রকৃতই গরিব। ২০১১ সালে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের সমীক্ষায় আমাদের পরিবারের নাম ওঠেনি। তাই সরকারি সুবিধা পাই না। এর সঙ্গে পদে থাকার যোগাযোগ নেই।’
আরও পড়ুন রাজ্য রাজনীতিতে ওজন বেড়েছে অভিষেকের, কমতি শুভেন্দুর
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তফসিলি পরিবারের জাগুর স্বামী গ্রামেই একটি ছোট্ট গুমটিতে পান, বিড়ি ও চা বিক্রি করেন। কখনও দিন মজুরের কাজও করতে হয়। খুব কষ্ট করেই দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে কিছুটা লেখাপড়া শিখিয়েছেন তাঁরা। ধারদেনা করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে সংসারের হাল ধরতে কাটোয়া-কালনা এসটিকেকে রোডে দাঁইহাট মোড়ে একটি ধাবায় কাজ করেন। কিন্তু, ওই পরিবারের যা আয় তা দিয়ে সংসার চললেও পাকা ঘর করা সম্ভব ছিল না। এর মধ্যেই ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে দাঁড়ান তিনি। জিতেও যান। আসন সংরক্ষিত হওয়ায় সহ-সভাপতি হন। অভাবের সংসারে হেঁশেল সামলে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির এলাকার নানা কাজ সামলান। সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা ও আবাস যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তারা যাতে দ্রুত সুবিধা পান তা নিয়ে তদ্বির করেন। কিন্তু লক্ষ্মীর ভান্ডার ও রেশন ছাড়া নিজে কোনও সরকারি সুবিধা পান না। এহেন কর্মী যে দলের সম্পদ তা স্বীকারও করেন কাটোয়ার তৃণমূল(TMC) বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, জাগু প্রধান প্রকৃত গরিব হলেও সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি তাঁদেরও অবাক করে। পদে থেকেও প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নেননি।