নিজস্ব প্রতিনিধি: হুগলি(Hooghly) জেলার অন্যতম মহকুমা শহর হল আরামবাগ(Aarambag)। সেই শহরেরই ব্যানার্জীপাড়ায়(Banerjee Para) দীর্ঘকাল ধরে বসবাস বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। যদিও তাঁদের আদি নিবাস ছিল বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়রে। সেখানকার বাড়িতেও পুজো হতো। এই বংশের পুরুষ রবীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পাত্রসায়র থেকে জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে চলে এসেছিলেন আরামবাগে। তিনি কিন্তু আরামবাগে আর পুজো শুরু করতেই চাননি। কথিত আছে, মা দুর্গা তখন রবীন্দ্রমোহনকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘এখানে তুই নতুন করে পুজো কর। আমার চ্যাঙ মাছের ঝোল(Chang Fish Soul) খেতে ইচ্ছে করছে। সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী শুধু চ্যাঙ মাছের ঝোল দিবি, তাহলেই হবে।’ সেই থেকে স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন রবীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বংশধরেরা। পাত্রসায়র ও আরামবাগ মিলিয়ে এই দুর্গাপুজো(Bandopadhay Family Durga Puja) ৪০০ বছর পার করে দিয়েছে। আরামবাগেই পুজো হচ্ছে দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে।
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মূর্তি এক চালার। ডাকের সাজ। দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, মহিষাসুরের মুখের আদলে একটুও পরিবর্তন হয়নি। এমনকি বাহনদেরও। বৃহস্পতিবার দশমী পড়লেও পরিবারের সদস্যদের কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়ার নিয়ম। খড় এবং তালপাতার ছাউনির পুজো মণ্ডপটি সাপের আড্ডাস্থল হয়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালে পাকা-মোজাইক করা স্থায়ী মণ্ডপ গড়া হয়েছে। ষষ্ঠীর দিন তিনকেজি চ্যাঙ মাছ পৌঁছে যায় ব্যানার্জী পাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে। মাছ জিইয়ে রাখা হয় অনেকগুলি বড় পাত্রে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে চ্যাঙ মাছের ঝোল করে মাকে পুজো দেওয়া হয়। সেটাই প্রসাদ। চ্যাঙ মাছের ঝোল প্রতীকী রেখে নবমীর দিন বলি দেওয়া হয়। শহরের বিশিষ্ট মানুষদের নিমন্ত্রণ করে পাঁঠার মাংস-ভাত খাওয়ানো হয়। তবে চ্যাঙ মাছের ঝোলের প্রসাদ পেতে তিনদিনই দূর দূরান্ত থেকে গ্রামের মানুষেরা আসেন। পুজোর খরচ চলে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া চাঁদায়।