নিজস্ব প্রতিনিধি: হুগলি(Hooghly) জেলার চুঁচুড়া(Chinsurah) শহর গড়েই ওঠে ডাচদের(Dutch) হাত ধরে। সেই শহরেই কার্যত ভাগ্যের পরিহাসে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন নীলাম্বর শীল(Nilambar Seal)। মূলত বর্গী ও ইংরেজদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে দুর্গের প্রাচীর বেষ্টিত চুঁচুড়াতে চলে আসেন। সেই দুর্গের ছিঁটেফোটাও অস্তিত্ব এখন আর নেই। সেই শহরেই কপাল খোলে নীলাম্বরের। ফুলে ফেঁপে ওঠে ব্যবসা। সেই সুবাদেই গড়ে তোলেন পেল্লায় বাড়ি যা আজকের চুঁচুড়া শহরে বড় শীলবাড়ি নামেই পরিচিত। ইন্দো-ডাচ স্থাপত্যশৈলীতে গড়ে তোলা সেই বাড়ির ঠাকুরদালেন শুরু হয়েছিল কার্তিক পুজো। পরে সেখানেই শুরু হয় ঘটে দুর্গাপুজো(Durga Pujo)। আরও পরে শুরু হয় প্রতিমা পুজো। কিন্তু সেই প্রতিমা আর পাঁচটা দুর্গাপুজোর প্রতিমা থেকে একদমই আলাদা। কেননা সেখানে হরগৌরীর পুজো হয়। সঙ্গে লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক ও গণেশ থাকলেও থাকে না মহিষাসুর। কোনও দেবতার হাতেই থাকে না কোনও অস্ত্র। এক পলকে দেখলে মনে হবে, বাড়ির জামাই সপরিবারে উপস্থিত হয়েছেন।
শীলদের পূর্ব পুরুষেরা ছিলেন উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার লোক। নীলাম্বর চুঁচুড়াতে যে বাড়ি করেছিলেন তাতে প্রথম দিকে ঠাকুর দালান ছিল না। নীলাম্বর শীলের মেজ ছেলে মদনমোহন শীলের তত্বাবধানে ১৮০৩ সালে তৈরি হয় সেই ঠাকুরদালান। গ্রীক কারিন্থিয়ান শৈলীর সরু স্তম্ভের সারির উপরে পঙ্খের কারুকার্যখচিত খিলান দেওয়া এই ঠাকুরদালান দেখার মতো। এই ঠাকুরদালানেই প্রতিবছর ষোড়শোপচারে দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়। শীলেরা বৈষ্ণব ভাবধারায় বিশ্বাসী। সেই মত অনুসারেই শীলবাড়ির দুর্গা প্রতিমাতে কোনো অস্ত্র বা অসুর থাকে না। দেবীর দশটির বদলে দুটি হাত, অভয়মুদ্রা বরদাত্রী দেবী দুর্গা শান্তি ও কল্যানের প্রতিমূর্তি। প্রাচীন ঘরনার একচালার মধ্যে শিবদূর্গার সঙ্গে থাকেন কার্ত্তিক গণেশ লক্ষ্মী ও সরস্বতী। ষষ্ঠীতে বোধন হয়ে চারদিনের মূল পুজো হয়।
উল্টোরথের দিন কাঠামো পুজো করে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ষষ্ঠীতে হয় বোধন। সপ্তমীতে পরিবারের কূলদেবতা শ্রীধর জিউকে নিয়ে আসা হয় ঠাকুরঘর থেকে ঠাকুরদালানে। পুজো শেষে সেদিন আবার তাঁকে ঠাকুরঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অষ্টমি, নবমী ও দশমীতেও একই রীতি পালিত হয়। এই বাড়তে কুমারী পুজোর কোনও রীতি না থাকলেও অষ্টমীতে ধুনো পোড়ানো হয়। বাড়ির সধবা মহিলারা মাথায় মাটির মালসা রেখে তাতে ধুনো পোড়ান।